সুপারশপ ও কাঁচাবাজার থেকে পণ্য কিনে নিরাপদে বাড়িতে পৌঁছানো বর্তমানে ক্রেতাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ফল বা শুকনা পণ্য কাগজের ব্যাগে নেয়া গেলেও মাছ-মাংসের মতো তরল পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে কাগজের ব্যাগ সহজেই ছিঁড়ে যাচ্ছে। এছাড়া পাটের ব্যাগের জন্য অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হচ্ছে, যা ক্রেতাদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করছে।
সাম্প্রতিক সময়ে সরকার ১ অক্টোবর থেকে সুপারশপে এবং ১ নভেম্বর থেকে কাঁচাবাজারে পলিথিন ও পলিপ্রোপিলিন ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। এই সিদ্ধান্তকে সচেতন নাগরিকরা স্বাগত জানালেও, পলিব্যাগের পরিবর্তে কার্যকর বিকল্প না থাকায় ক্রেতারা হতাশ। তারা বলছেন, বাজারে এখনও পলিব্যাগের সহজলভ্য বিকল্প পাওয়া যাচ্ছে না, যার ফলে বাধ্য হয়েই পলিব্যাগ ব্যবহার করতে হচ্ছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, শুধুমাত্র ঢাকায় প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ পলিব্যাগ ব্যবহার করা হয়, এবং প্রতিদিন জমা হয় প্রায় ২ কোটি পলিব্যাগ। পলিথিন পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক হওয়ায় এর ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলেও, এখনও এর কার্যকর বিকল্প না আসায় মানুষ পুরনো অভ্যাসে ফিরে যাচ্ছে।
সুপারশপগুলো বিনামূল্যে কাগজের ব্যাগ এবং স্বল্পমূল্যে পাট ও কাপড়ের ব্যাগ সরবরাহ করছে। তবে, ক্রেতারা এসব বিকল্প নিয়ে সন্তুষ্ট নন, বিশেষ করে মাছ-মাংসের মতো পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে। অনেক ক্রেতা একাধিক ব্যাগ দাবি করছেন, যা ব্যাগের সরবরাহের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।
পরিবেশবিদরা বলছেন, পলিব্যাগের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম এমন বিকল্পের প্রচলন জরুরি। পরিবেশবিদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, “পলিথিনের বিকল্প হিসেবে এমন পণ্য বাজারে আনতে হবে যা খরচ কমাবে এবং পরিবেশবান্ধব হবে। এজন্য গবেষণা বাড়াতে হবে এবং বিকল্প সরবরাহের সঠিক বাস্তবায়ন করতে হবে।”
বাংলাদেশে পলিথিন ও প্লাস্টিক উৎপাদনকারী প্রায় ৩ হাজার কারখানা রয়েছে, যা দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখে। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, পলিথিন উৎপাদনকারী শিল্পকে পরিবেশবান্ধব পণ্য উৎপাদনের দিকে ধাবিত করলে পলিব্যাগের ব্যবহার কমানো সম্ভব হবে। এতে করে একদিকে যেমন পরিবেশ রক্ষা করা যাবে, অন্যদিকে শিল্পখাতের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত হবে।
পলিথিন নিষিদ্ধের মাধ্যমে পরিবেশ সুরক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়া হলেও, এর কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন মানসম্মত বিকল্প পণ্যের সরবরাহ এবং এর উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সঠিক পরিকল্পনা।