রাজধানীর বনানী স্টার কাবাব রেস্তোরাঁর সাম্প্রতিক এক ঘটনায় সামাজিক ও গণমাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। কাচ্চি বিরিয়ানির সঙ্গে পচা ও গন্ধযুক্ত টিক্কা দেওয়ার প্রতিবাদ করায় এক গ্রাহকের ওপর স্টার কাবাবের কর্মচারীদের বর্বরোচিত হামলার ঘটনায় শোরগোল পরে যায়। গ্রাহক সালেহ মোহাম্মদ রশীদ অলকের ওপর এই অমানবিক আক্রমণের প্রতিক্রিয়া হিসেবে স্টার কাবাবের সিইও এস. এম. মনিরুজ্জামান ক্ষমা চেয়ে জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠানটি এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ১০০০ এতিমকে একবেলা খাবার পরিবেশন করবে।
ঘটনার সূত্রপাত হয় গত ৬ অক্টোবর, ২০২৪ তারিখে। বনানী স্টার কাবাবে সালেহ মোহাম্মদ রশীদ অলক এবং তার এক বন্ধু কাচ্চি বিরিয়ানি অর্ডার করেন। খাবারের মধ্যে দেওয়া টিক্কায় পচা এবং গন্ধযুক্ত অবস্থা দেখে অলক প্রতিবাদ জানান। তার অভিযোগের জবাবে স্টার কাবাবের ম্যানেজার মন্তব্য করেন, “জীবনে টিক্কা খাননি আপনি, এটা এমনই হয়,” যা গ্রাহককে আরও ক্ষুব্ধ করে।
এই বচসার পরে ম্যানেজার তার সহকর্মীদের ডেকে অলককে রেস্টুরেন্টের দোতলা থেকে নামিয়ে মারধর করেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, স্টার কাবাবের ১৪ থেকে ১৫ জন কর্মী এই হামলায় অংশ নেন। এই ঘটনায় অলকের ডান হাত ও ডান পা ভেঙে যায়, মাথা ফেটে রক্তাক্ত হন, এবং তাকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহত গ্রাহকের রক্তাক্ত অবস্থা এবং হামলার ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে, জনমনে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
এই বর্বর ঘটনার পরে, বনানী থানায় অলক মামলা দায়ের করেন। বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাসেল সারোয়ার জানান, এই মামলায় স্টার কাবাবের ১১ জন কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং অজ্ঞাত আরও ৪-৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুলিশের মতে, তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনার সাথে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।
সামাজিক ও গণমাধ্যমে এই ঘটনার সমালোচনা হওয়ার পর স্টার কাবাবের সিইও এস. এম. মনিরুজ্জামান একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেন। তিনি এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য গভীর দুঃখপ্রকাশ করেন এবং ভুক্তভোগী সালেহ মোহাম্মদ রশীদ অলকের কাছে ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমা চান। প্রতিষ্ঠানটির ফেসবুক পেজে প্রকাশিত বিবৃতিতে তারা গ্রাহকদের সাথে এরকম কোনো ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং এই ঘটনার সাথে জড়িত কর্মচারীদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
এরপর, অলক স্টার কাবাবের কাছ থেকে চিকিৎসা খরচ ও ক্ষতিপূরণ গ্রহণ না করে, ক্ষমার শর্ত হিসেবে ১০০০ এতিমকে একবেলা উন্নতমানের খাবার বিনামূল্যে খাওয়ানোর দাবি জানান। স্টার কাবাবের সিইও তার এই দাবির প্রতি সম্মতি জানিয়ে আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে এতিমদের জন্য খাবার আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এই উদ্যোগের মাধ্যমে স্টার কাবাব প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের সম্মান পুনরুদ্ধার এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের ভুল না করার বার্তা দিতে চেয়েছে।
এই ঘটনার পর স্টার কাবাব নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়। ভুক্তভোগী গ্রাহকের ওপর হামলার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে স্টার কাবাবের বিরুদ্ধে তীব্র অসন্তোষ দেখা যায়। বিশেষ করে, এক সুপরিচিত রেস্টুরেন্টে এভাবে গ্রাহকের ওপর হামলার ঘটনা অনেককে হতবাক করেছে। অনেকেই তাদের সামাজিক মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে স্টার কাবাবের বিরুদ্ধে বয়কটের ডাক দেন এবং এর সুনাম নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
অপরদিকে, ১০০০ এতিমকে খাওয়ানোর প্রতিশ্রুতি অনেকের কাছে সদর্থক প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। তারা মনে করছেন, স্টার কাবাবের এই উদ্যোগ ক্ষমাপ্রার্থনার একটি নিদর্শন এবং প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছে। তবে, কিছু সমালোচক মনে করছেন, এই ধরনের ঘটনা রোধে শুধুমাত্র ক্ষমা এবং প্রতিশ্রুতি যথেষ্ট নয়, বরং গ্রাহকদের সাথে আরো ভালো আচরণ এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্টার কাবাবের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
এ ধরনের ঘটনার পর, স্টার কাবাব কর্তৃপক্ষ ভবিষ্যতে এমন কোনো সমস্যার পুনরাবৃত্তি রোধে পদক্ষেপ নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, তারা গ্রাহকদের সাথে আরো ভালো আচরণ এবং খাদ্যের গুণগত মান বজায় রাখতে আরও কঠোর নজরদারি করবে।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, স্টার কাবাবের একটি উল্লেখযোগ্য দায়িত্ব হলো তাদের প্রাতিষ্ঠানিক সেবা মান বৃদ্ধি করা। গ্রাহকের প্রতিক্রিয়া গুরুত্বসহকারে নেওয়া এবং কর্মীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদান করা