পার্বত্য তিন জেলার খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙামাটিতে প্রতিবছর প্রায় সাড়ে ৫০০ কোটি টাকার চাঁদাবাজি হচ্ছে। স্থানীয় পরিবহন, দোকানপাট এবং বাজার থেকে এসব চাঁদা তোলে কয়েকটি আঞ্চলিক সংগঠন। এসব সংগঠন নিজেদের অস্ত্রধারী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে এবং এলাকাগুলোতে নিজেদের প্রভাব বজায় রাখতে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ছে। এর ফলে পাহাড়ি অঞ্চলের পরিস্থিতি ক্রমেই অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে, যা স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক ও উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলছে।
খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকের পথে বড় যানবাহন তেমন দেখা না গেলেও স্থানীয় মানুষের চলাচলে ব্যাটারি চালিত রিকশা ব্যবহার হচ্ছে। তবে এসব রিকশার মালিকদেরও চাঁদা দিতে হয়। জানা গেছে, প্রতিটি ব্যাটারি চালিত রিকশাকে বছরে ১ হাজার টাকা করে চাঁদা দিতে হয় আঞ্চলিক সংগঠনগুলোকে। এই চাঁদার টোকেন দেখিয়েই তারা অবাধে চলাচল করতে পারে।
খাগড়াছড়ির স্বনির্ভর বাজারেও একই চিত্র দেখা যায়। পাহাড়ি ও বাঙালি উভয়কে এখানেও চাঁদা দিতে হয়। শহরের অন্যান্য এলাকায়ও বিভিন্ন যানবাহনকে চাঁদা দিতে বাধ্য করা হয়। তবে চাঁদাবাজি নিয়ে কেউ সরাসরি কথা বলতে চায় না। চাঁদার বিষয়ে প্রশ্ন করলে স্থানীয়রা এড়িয়ে যান, এমনকি প্রশাসনের প্রতিনিধিরাও এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করতে নারাজ।
অঞ্চলের অন্যতম আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফ (ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট) এর মুখপাত্র অংগ্য মারমা অবশ্য অকপটে স্বীকার করেছেন চাঁদা তোলার বিষয়টি। তিনি বলেন, “একটি সংগঠন পরিচালনা করতে কিছু ফান্ড দরকার। সেটা হতে পারে সদস্যদের কাছ থেকে বা শুভাকাঙ্ক্ষীদের মাধ্যমে।” চাঁদা সংগ্রহের বৈধতা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “প্রায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছ থেকেই চাঁদা তোলা হয়।”
তিনি আরও দাবি করেন, সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর পক্ষে, “মানুষ যখন বহুদিন ধরে নিপীড়িত হয়, তখন তারা সশস্ত্র হয়ে যায়।”
এভাবে বছরে সাড়ে ৫০০ কোটি টাকার চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছেন পার্বত্য অঞ্চলের প্রায় ১৮ লাখ মানুষ। এর ফলে তাদের দৈনন্দিন অর্থনীতি ও সামাজিক জীবনে প্রভাব পড়ছে। অস্থির পরিস্থিতি ও চাঁদাবাজির কারণে স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্যেও স্থবিরতা দেখা দিচ্ছে। তবুও, প্রশাসন ও স্থানীয় নেতারা চাঁদাবাজি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছে না, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।