যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে গত এক সপ্তাহে ১৩১ ট্রাকে করে ৪১১ মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে রফতানি হয়েছে। এই ইলিশ রফতানি প্রক্রিয়া বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়, কারণ প্রতিবছর দুর্গাপূজার সময় ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ইলিশের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। তবে দেশীয় বাজারে ইলিশের দাম এবং রফতানির দামের মধ্যে পার্থক্য নিয়ে ক্রেতারা প্রশ্ন তুলছেন, যা নিয়ে আলোচনা প্রয়োজন।
গত সপ্তাহের রফতানি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত ১৩১টি ট্রাকে ইলিশ পাঠানো হয়েছে, যার মোট ওজন ৪১১ মেট্রিক টন ৩০০ কেজি। এর মধ্যে:
২৬ সেপ্টেম্বর ২০ ট্রাকে ৫৪ টন ৪৬০ কেজি ইলিশ
২৮ সেপ্টেম্বর ১৫ ট্রাকে ৪৫ টন ২০০ কেজি
২৯ সেপ্টেম্বর ৬ ট্রাকে ১৯ টন
৩০ সেপ্টেম্বর ৩০ ট্রাকে ৮৯ টন
১ অক্টোবর ২৩ ট্রাকে ৬৯ টন ৬৪০ কেজি
৩ অক্টোবর ৩০ ট্রাকে ৯২ টন
৫ অক্টোবর সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৩ ট্রাকে ৪২ টন ইলিশ রফতানি হয়েছে
এই পরিসংখ্যানগুলো দেখায় যে, রফতানির মাধ্যমে মোট ৪১১ মেট্রিক টনের বেশি ইলিশ ভারত পাঠানো হয়েছে, যা দুর্গাপূজা উপলক্ষে পশ্চিমবঙ্গের চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে।
প্রতি কেজি ইলিশ রফতানি করা হচ্ছে ১০ ডলারে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১,১৮০ টাকা। কিন্তু বেনাপোলের স্থানীয় মাছ বাজারে একই আকারের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে প্রায় ১,৮০০ টাকায়। এই মূল্য পার্থক্য সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। বেনাপোলে মাছ কিনতে আসা এক ক্রেতা কামাল হোসেন বলেন, “একই মাছ ভারতের ক্রেতারা কম দামে কিনছে, অথচ আমাদের দেশের ভোক্তাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।” এই প্রশ্ন অনেকেই করছেন, কেন দেশের জনগণ ইলিশের জন্য এত বেশি টাকা দিতে বাধ্য হচ্ছে যখন তা কম দামে রফতানি হচ্ছে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান এই বিষয়ে বলেন, “ইলিশ রফতানির পরিপত্রটি কয়েক বছর আগের। তবে এখন দেশীয় বাজারের সঙ্গে সংগতি রেখে রফতানির দাম সমন্বয় হতে পারে।”
এই বক্তব্য থেকে বোঝা যায় যে, ইলিশ রফতানির নিয়ম ও দাম কয়েক বছর আগে নির্ধারিত হয়েছে এবং বর্তমান বাজার পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য আরও কিছু পরিবর্তন আসতে পারে।
এ বছর দুর্গাপূজার জন্য বাংলাদেশ সরকার ভারতে ইলিশ রফতানির অনুমতি দিয়েছে। প্রথমে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তিন হাজার টন ইলিশ রফতানির সিদ্ধান্ত নিলেও শেষ পর্যন্ত ২,৪২০ টন ইলিশ রফতানির অনুমতি দেওয়া হয়। ৪৯টি প্রতিষ্ঠান এই রফতানির দায়িত্বে আছে, যার মধ্যে ৪৮টি প্রতিষ্ঠান ৫০ টন করে ইলিশ রফতানি করছে এবং একটি প্রতিষ্ঠান ২০ টন ইলিশ রফতানি করছে।
দুর্গাপূজা পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম বড় উৎসব। এই সময়ে পশ্চিমবঙ্গের মানুষদের ইলিশ মাছের প্রতি ভালোবাসা ও চাহিদা বেড়ে যায়। বাংলাদেশের ইলিশ মাছ তাদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয়। পশ্চিমবঙ্গের বাজারে বাংলাদেশি ইলিশ পৌঁছানোর ফলে ভারতের ক্রেতারা সাশ্রয়ী দামে এই মাছ কিনতে পারছেন। কিন্তু এই রফতানি বাংলাদেশের স্থানীয় বাজারে প্রভাব ফেলছে বলে অনেকের মত।
ইলিশ মাছ বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান মাছ এবং এর স্বাদ ও পুষ্টিগুণের কারণে সারা দেশে এর চাহিদা অত্যধিক। তবে ইলিশের সরবরাহ ও দাম নিয়ে সবসময় বিতর্ক থাকছে। বিশেষ করে ইলিশের মৌসুমে দাম কিছুটা কম থাকলেও বছরের অন্যান্য সময়ে এর দাম বাড়ে। বর্তমানে রফতানির কারণে দেশীয় বাজারে ইলিশের সংকট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, যার ফলে দামের উপর আরও চাপ পড়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকার ও ব্যবসায়ী মহলকে আরও চিন্তাভাবনা করতে হবে যাতে রফতানির পাশাপাশি দেশের সাধারণ জনগণও সাশ্রয়ী দামে ইলিশ কিনতে পারে। দেশের মানুষের মৌলিক খাদ্যপণ্যগুলো যাতে সবার নাগালের মধ্যে থাকে, সে বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।
মৎস্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রফতানি নিয়মিতভাবে নজরদারি করা হচ্ছে এবং এর মাধ্যমে স্থানীয় বাজারের সাথে সমন্বয় রেখে ভবিষ্যতে আরও পরিকল্পনা করা হবে।