ঢাকা: দেশের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) প্রকল্পগুলোর মধ্যে এবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে গরুর পুষ্টি উন্নয়ন ও বাড়তি দুধ উৎপাদনের লক্ষ্যে নেয়া উন্নতমানের কাঁচা ঘাস (নেপিয়ার) চাষ প্রকল্প। তবে সমালোচনার মুখে পড়েছে প্রকল্পের ব্যয়বহুল বিদেশ সফর পরিকল্পনা।
২০১৮ সালে নেয়া ১১৮ কোটি টাকার এই প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল দুর্যোগকালীন সময়ে গো-খাদ্যের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা। তিন বছর মেয়াদী প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ডিসেম্বর, তবে ইতিমধ্যে মাত্র ২৭ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছে, যা ৩১ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এ অবস্থায় প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় আরও এক বছরের সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হয়েছে।
তবে প্রকল্পের বাইরের আলোচনায় এসেছে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের পরিকল্পনা। এই প্রকল্পের আওতায় ৩২ জন কর্মকর্তাকে অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে ঘাস চাষের উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিতে পাঠানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, যার ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা। কিন্তু এই ঘাস বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরেই চাষ হয়ে আসছে, ফলে বিশ্লেষকরা এই ব্যয়কে অপ্রয়োজনীয় ও অযৌক্তিক হিসেবে অভিহিত করছেন।
রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক বলেন, “আমরা অতীতে দেখেছি, প্রজেক্টের নাম করে কর্মকর্তারা বিদেশে গেছেন, কিন্তু ফিরে আসার পর আর সংশ্লিষ্ট বিভাগে কাজ করেননি। এতে প্রকৃতপক্ষে কোনো বাস্তব উপকার পাওয়া যায়নি।”
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান এ ধরনের বিদেশ সফরকে “প্রমোদ ভ্রমণ” হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “আমলাতন্ত্রের মধ্যে বিদেশ ভ্রমণের একটি মানসিকতা তৈরি হয়েছে, যা শুধুমাত্র রাষ্ট্রীয় তহবিলের অপব্যবহার।”
এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইতোমধ্যে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বন্ধ ও বিলাসী ব্যয়ের ক্ষেত্রে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তাই এই পরিস্থিতিতে প্রকল্পের কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের ইচ্ছা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কেও চিন্তায় ফেলে দিয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, সরকারি প্রকল্পগুলোর অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে আরও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রয়োজন। বিদেশ সফরের পরিবর্তে স্থানীয়ভাবে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হলে জনগণের অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।