শেরপুরে টানা ভারী বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে জেলার সব পাহাড়ি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাঁধ ভেঙে জেলার নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী, নকলা, শ্রীবরদী এবং শেরপুর সদরের অন্তত ৪০টি ইউনিয়নের দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আকস্মিক এই বন্যায় এখন পর্যন্ত চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে এবং প্রায় দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছে।
নিহত চারজনের পরিচয়
নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছানোয়ার হোসেন মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে জানান, বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছেন নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার ইদ্রিস আলী, খলিলুর রহমান, এবং বাঘবেড় বালুরচর গ্রামের ওমিজা বেগমসহ চারজন। এছাড়াও একজন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।
উদ্ধার কাজ ব্যাহত
সেনাবাহিনী, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সমন্বিত উদ্যোগে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে পানির প্রবল স্রোত এবং নৌযানের অভাবে উদ্ধার কাজ ব্যাহত হচ্ছে। সেনাবাহিনীর ছয়টি টিম ছয়টি স্পিডবোট নিয়ে উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
নদীর পানির অবস্থা
শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, জেলার ভোগাই নদীর নাকুগাঁও পয়েন্টে পানি ১ সেন্টিমিটার এবং নালিতাবাড়ী পয়েন্টে ৫৭ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। চেল্লাখালী নদীর ওয়াটার গেজের পরিমাণ জানা সম্ভব না হলেও, মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র, মৃগী ও দশানী নদীর পানিও দ্রুত বাড়ছে।
নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত
শুক্রবার রাত থেকে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। অনেক পরিবার ঘরের চালা, সিলিং বা মাচায় আশ্রয় নিয়েছে। বেসরকারি সংগঠনগুলো ও জেলা বিএনপি দুর্গত এলাকায় শুকনো খাবার ও ত্রাণ বিতরণ করেছে।
বাঁধ ভাঙা ও সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতীর বিভিন্ন বাঁধ ভেঙে গেছে। শেরপুর-নালিতাবাড়ী সড়কসহ জেলার অন্তত ১০টি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্লাবিত ও বিধ্বস্ত হয়েছে। পানিতে ভেসে গেছে পুকুরের মাছ এবং গবাদি পশু। নষ্ট হয়েছে আমনক্ষেত।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষি
জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, প্রায় ৮৫০ হেক্টর আমন ধান ও ৯০০ হেক্টর সবজির জমি পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। বন্যায় ধসে গেছে কাঁচা ঘরবাড়ি, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও চিকিৎসাকেন্দ্র।
বৃষ্টিপাতের পরিমাণ
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, শেরপুরে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৭ মিলিমিটার এবং নালিতাবাড়ীর দুটি পয়েন্টে যথাক্রমে ১৭০ ও ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।