চট্টগ্রামে ডিমের বাজারে লাগামহীন অস্থিরতা চলছে। উৎপাদক থেকে খুচরা পর্যায় পর্যন্ত কোন ক্রয়-বিক্রয়ের রশিদ নেই এবং ব্যবসায়ীরা সরকারের নির্ধারিত দামের তোয়াক্কা না করেই নিজেদের ইচ্ছেমতো দাম নির্ধারণ করছেন। দীর্ঘদিন ধরে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের অভিযান চালানো হলেও এই অস্থির বাজারে স্বস্তি ফিরছে না।
চট্টগ্রামে প্রতিদিন প্রায় ২৫ লাখ ডিমের চাহিদা রয়েছে। এর প্রায় ৮০ শতাংশ সরবরাহ আসে টাঙ্গাইল থেকে, বাকিটা আসে গাজীপুর ও সাভার থেকে। এসব ডিম সরবরাহ করেন পাহাড়তলী বাজারের পাইকাররা, যাদের কাছ থেকেই খুচরা বিক্রেতারা ডিম সংগ্রহ করে। তবে বাজারে গত মাসখানেক ধরে ডিমের দাম বেড়ে চলছে।
সরকার নির্ধারিত দাম অনুযায়ী, ডিমের ডজনের মূল্য ১৪০ টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫৪ টাকায়, আর খুচরায় ডিমের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭৫ টাকা। এর ফলে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি ডজন ডিমে ৩৩ টাকা বেশি দিতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের অভিযানে মিলেছে দাম নিয়ে কারসাজির প্রমাণ। ব্যবসায়ীরা ক্রয়-বিক্রয়ের কোনো রশিদ রাখছেন না, যা তাদের দাম কারসাজির সুযোগ করে দিচ্ছে। চট্টগ্রামের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপপরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ বলেন, “পাইকারি বিক্রেতারা ক্রয় ভাউচার রাখছেন না, আবার তারা বিক্রয়ের জন্যও কোনো ভাউচার দিচ্ছেন না। এই সুযোগে খুচরা বিক্রেতারা নিজেদের মতো করে দাম বাড়িয়ে দেন এবং বেশি দাম দিয়ে ডিম কেনার মিথ্যা দাবি করেন।”
পাহাড়তলী বাজারের পাইকারদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দামের কারসাজির প্রমাণ পাওয়া গেছে। পাইকারদের মতে, উৎপাদন পর্যায়ে কঠোর মনিটরিং না থাকাতেই এই সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তাদের দাবি, উৎপাদন পর্যায়ে দাম কমলে পাইকারি ও খুচরা বাজারেও দাম কমবে।
ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বলছে, ডিমের বাজারে অস্থিরতার মূল কারণ চিহ্নিত হলেও আইনি ব্যবস্থা এখনো জরিমানা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। তারা আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ দিয়েছে, যাতে ব্যবসায়ীরা যথাযথ নীতি মেনে চলেন এবং ভোক্তাদের ন্যায্যমূল্যে ডিম কেনার সুযোগ নিশ্চিত হয়।
এদিকে, ভোক্তারা এই পরিস্থিতিতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। তাদের অভিযোগ, প্রতি সপ্তাহেই ডিমের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছামতো দাম নির্ধারণ করছে। সরকারের নির্ধারিত দামে বাজার নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা আরও জোরালোভাবে অনুভব করছেন তারা।
ডিমের বাজারে এই অস্থিতিশীলতা চলতে থাকলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার খরচ আরও বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সরকারের উদ্যোগ এবং ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কার্যক্রমের কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে, যা দ্রুত সমাধানের দাবি জানাচ্ছে সচেতন মহল।