ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলায় ভারী বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ১৯টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ধোবাউড়া উপজেলার নেতাই নদীর বাঁধ ভেঙে সাতটি ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। রাস্তাঘাট, সবজি বাগান, মাছের খামার এবং কৃষকদের রোপণকৃত আমন ধানের বিস্তীর্ণ ক্ষেত তলিয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে কৃষকেরা চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন, আর সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
অন্যদিকে, হালুয়াঘাট উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় আছেন। এখানেও পানির নিচে তলিয়ে গেছে কৃষকের রোপণকৃত ধান, সবজি বাগান, মাছের খামারসহ বিশাল কৃষিজমি। ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করায় মানুষজন চরম দুর্ভোগের মুখোমুখি হচ্ছেন। যারা পানির মধ্যে অবস্থান করছেন, তারা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছেন, ফলে দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬টা থেকে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়, যা পরবর্তীতে পাহাড়ি ঢলের সাথে মিলে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। শুক্রবার বিকেল ৪টায় বৃষ্টি কিছুটা কমলেও শনিবার সকাল থেকে আবারও বৃষ্টি শুরু হয়েছে, যা পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
ধোবাউড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত শারমিন জানিয়েছেন, ‘রাতে পানিবন্দি এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল না, ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ এখনো বলা যাচ্ছে না, তবে কোনো প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। দুর্গতদের জন্য শুকনো খাবার সরবরাহসহ সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।’
স্থানীয় প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিরা জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ ও সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তবে বন্যার্ত মানুষ এখনো আতঙ্কে দিন পার করছেন। তাদের ঘরবাড়ি, ফসল এবং জীবিকা নিয়ে চিন্তিত। ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও কিছু সময় লাগবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বন্যা কবলিত এলাকার মানুষজন সরকারি সহায়তার অপেক্ষায় আছেন। তাদের অভিযোগ, এই ধরনের দুর্যোগে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির অভাব ছিল, ফলে তারা অসহায় অবস্থায় পড়েছেন। বিদ্যুৎ, খাদ্য এবং নিরাপদ পানির অভাবের কারণে মানুষজনের কষ্ট বেড়েছে। স্থানীয় প্রশাসন বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালালেও আরও সহযোগিতা প্রয়োজন বলে দাবি করছেন এলাকাবাসী।
মুষলধারে বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢলের ফলে হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়ার মানুষজন এখন এক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি। জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব এসব এলাকায় বারবার পড়ছে, যার ফলে ফসলহানি এবং মানুষের জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
এখন বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত এসব এলাকার মানুষদের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক এবং বেসরকারি সংগঠনগুলোর দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।