ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হুতিদের লক্ষ্য করে সামরিক হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পেন্টাগন জানিয়েছে, এই হামলায় উড়োজাহাজ ও যুদ্ধজাহাজ ব্যবহার করা হয়েছে। হামলাটি হুতিদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি ও সরঞ্জামের ওপর চালানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর। এ ঘটনার খবর আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, হুতি যোদ্ধাদের অন্তত ১৫টি লক্ষ্যবস্তুতে এই হামলা চালানো হয়েছে। ইয়েমেনের রাজধানী সানা এবং আরও কিছু প্রধান শহরে কয়েকটি শক্তিশালী বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। হামলায় হুতিদের অস্ত্রভাণ্ডার, সামরিক ঘাঁটি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম লক্ষ্য করে আঘাত হানা হয়েছে। বিশেষ করে, ইরান-সমর্থিত এই গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণাধীন বেশ কিছু সামরিক সরঞ্জাম ধ্বংস করা হয়েছে।
সম্প্রতি হুতিদের হামলা কার্যক্রম বেড়ে গেছে। গাজার যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে হুতিরা লোহিত সাগরে প্রায় ১০০টি বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা চালিয়েছে। হুতিদের দাবি, ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের চালানো হামলার প্রতিশোধ নিতে তারা এসব হামলা করছে। এসব হামলায় দুটি বাণিজ্যিক জাহাজ ডুবে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বিপর্যয় সৃষ্টি হচ্ছে, যা বিশ্বব্যাপী নজর কাড়ছে।
হুতিদের এ ধরনের হামলা আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিদ্রোহী এই গোষ্ঠীটি সম্প্রতি ইয়েমেনের আকাশপথে একটি ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করেছে। ড্রোনটি যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এমকিউ-৯ রিপার, যা অত্যন্ত উন্নত প্রযুক্তির চালকবিহীন উড়োজাহাজ। এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রও তাদের একটি ড্রোন হারানোর কথা স্বীকার করেছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সক্ষমতার ওপর একটি বড় আঘাত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
গত সপ্তাহে পেন্টাগন থেকে জানানো হয়, হুতিরা যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর জাহাজের ওপরও হামলা চালিয়েছে। তবে তাদের ছোড়া সব অস্ত্র ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে মার্কিন বাহিনী। এই অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সতর্ক অবস্থানে রয়েছে এবং যেকোনো হামলার জবাব দিতে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছে।
ইয়েমেনের এই সংঘাতের সূত্রপাত দীর্ঘদিন ধরে চলছে। ইরান-সমর্থিত হুতিরা এবং সৌদি আরব সমর্থিত ইয়েমেন সরকার, এই দুই পক্ষের মধ্যকার লড়াইটি ইয়েমেনের জনগণের জন্যও এক চরম বিপর্যয়ের কারণ হয়েছে। দেশটি মানবিক সংকটে নিমজ্জিত, খাদ্য ও চিকিৎসা সরবরাহে তীব্র ঘাটতি দেখা দিয়েছে। হুতিদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক এই হামলা নতুন করে এই সংকটের মাত্রা বাড়াতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
যদিও যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তারা হুতিদের হামলার জবাবে আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে, তবুও এই সংঘাতের উত্তেজনা বৃদ্ধির আশঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকেই। বিশেষ করে লোহিত সাগর এবং ইয়েমেন উপকূলে চলমান হুতি হামলা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতি কীভাবে আরও এগোবে এবং এর প্রভাব বিশ্ব রাজনীতিতে কতটা পড়বে তা এখনো বলা কঠিন। তবে ইয়েমেনের চলমান পরিস্থিতি এবং হুতিদের কার্যক্রম আন্তর্জাতিক দৃষ্টিতে যে গুরুতর ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা নিশ্চিত।