আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক সম্প্রতি এক বিবৃতিতে সারাদেশে চরম দুঃশাসনের অভিযোগ করেছেন। তার দাবি অনুযায়ী, বিএনপি ও তাদের সহযোগীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতন চালাচ্ছে। এর পাশাপাশি মিথ্যা মামলায় আওয়ামী লীগের সদস্যদের গ্রেপ্তার, চাঁদাবাজি, খুন, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগের অভিযোগও তুলেছেন তিনি। শুক্রবার (৪ অক্টোবর) রাতে আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক পোস্টে এসব বক্তব্য দেন নানক।
নানকের বিবৃতিতে বিএনপি ও তাদের মিত্রদের বিরুদ্ধে সরাসরি সহিংসতার অভিযোগ উঠে এসেছে। তিনি দাবি করেন, সারা দেশে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উপর প্রতিনিয়ত আক্রমণ হচ্ছে। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, “আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গলা কেটে হত্যা করা হচ্ছে।” তার মতে, আওয়ামী লীগের কর্মীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা এখন নিয়মিত হয়ে উঠেছে।
নানক আরও বলেন, “বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক সহিংসতা ঘটছে, কিন্তু অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।” তিনি এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি তোলেন।
নানকের ভাষ্যমতে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শুধু সহিংসতার শিকারই হচ্ছেন না, বরং তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলাও করা হচ্ছে। তিনি জানান, ১৫ বছর বয়সী কিশোর থেকে শুরু করে ৯০ বছর বয়সী বৃদ্ধ পর্যন্ত সবাই এই মিথ্যা মামলার শিকার হচ্ছেন। “এমনকি, আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মী রেহাই পাচ্ছে না,” বলেন নানক।
বিএনপি ও তাদের মিত্রদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় আওয়ামী লীগ কর্মীদের ওপর মিথ্যা মামলা ও গ্রেপ্তারের মাধ্যমে অত্যাচার চালানোর অভিযোগও তুলেছেন তিনি। নানক এ প্রসঙ্গে বলেন, “দেশজুড়ে এক অকল্পনীয় দুঃশাসন চলছে। যারা অপরাধ করছে, তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না, বরং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে নির্যাতন চালানো হচ্ছে।”
বিবৃতিতে অ্যাডভোকেট নানক দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রতিও ইঙ্গিত করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য আকাশ ছোঁয়া। সাধারণ মানুষ চরম অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে। তার মতে, জনগণের এই অসহায় অবস্থাকে উপেক্ষা করে একটি অবৈধ সরকার আওয়ামী লীগ নিধনে মেতে উঠেছে। তিনি দাবি করেন, এই সংকটজনক অবস্থার জন্য ড. ইউনূসকে দায়ী করা উচিত, কারণ তার নেতৃত্বে একটি অবৈধ শক্তি দেশের ক্ষমতা দখল করেছে।
নানকের দাবি অনুযায়ী, বিএনপি ও তার মিত্ররা ড. ইউনূসের নেতৃত্বে ক্ষমতা দখল করে হত্যাকাণ্ড, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মহোৎসব শুরু করেছে। এতে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে, এবং দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ভেঙে পড়েছে।
নানকের বিবৃতিতে উঠে আসে আরও এক উদ্বেগজনক বিষয়—দুর্গাপূজার সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের মূর্তি ভাঙচুরের অভিযোগ। তার মতে, এই ঘটনাগুলো হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিচ্ছে এবং তাদের নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে ফেলছে। নানক এসব ঘটনাকেও বিএনপি ও তাদের মিত্রদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে দেখছেন। তিনি দাবি করেন, “এটি পরিকল্পিতভাবে করা হচ্ছে যাতে দেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা উসকে দেওয়া যায়।”
নানকের অভিযোগ শুধু ব্যক্তি বা গোষ্ঠী নয়, বরং দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির দিকেও ইঙ্গিত করে। তার ভাষ্যমতে, বিএনপি ও তাদের সহযোগীরা থানাগুলোতে লুটপাট চালাচ্ছে এবং অবৈধ অস্ত্রধারীরা সন্ত্রাসী কার্যক্রম অবাধে চালাচ্ছে। নানক বলেন, “এই সন্ত্রাসী খুনিদের সাধারণ মানুষ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হত্যা করতে একপ্রকার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।”
তিনি আরও দাবি করেন, দেশজুড়ে খুন, সন্ত্রাস ও লুটপাটের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার পরও অপরাধীদের গ্রেপ্তার বা তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হচ্ছে না। এই উদাসীনতাকে তিনি সরকারের অপারদর্শিতার প্রমাণ হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং বলেন, “আমাদের দলের নেতাকর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছে, অথচ অপরাধীদের ধরা হচ্ছে না।”
অ্যাডভোকেট নানক তার বিবৃতিতে আরও একটি শক্তিশালী দাবি তুলেছেন—অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা হবে। তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, “এই জঘন্য অপরাধীদের যারা মদদ দিচ্ছে, তাদের বিচার একদিন বাংলার মাটিতে হবেই।”
নানকের বিবৃতি থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, দেশে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত টানাপোড়েনের মধ্যে রয়েছে। তার অভিযোগের ভিত্তিতে বলা যায়, দেশের অনেক অঞ্চলে সহিংসতা, লুটপাট, এবং অগ্নিসংযোগ অব্যাহত আছে। বিএনপি ও তাদের মিত্ররা রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল ও সহিংসতা চালানোর চেষ্টায় মত্ত, এমনটাই মনে করছে আওয়ামী লীগ।
তবে সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে, তা নির্ভর করছে সরকারের প্রতিক্রিয়ার ওপর। সরকার কি এসব অভিযোগের সমাধানে উদ্যোগী হবে, নাকি রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়বে? নানকের বিবৃতিতে বলা হচ্ছে, আওয়ামী লীগ যে কোনও মূল্যে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য বদ্ধপরিকর। তবে তা বাস্তবায়িত হবে কিনা, তা সময়ই বলে দেবে।