জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া খাদ্যসচিব ইলাহী দাদ খানের নিয়োগ এক দিনের মাথায় বাতিল করেছে। আজ মঙ্গলবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলেস উর রহমান এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানিয়েছেন। সন্ধ্যায় বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. মানসুর হোসেন।

নিয়োগ ও বাতিলের পেছনের কারণ
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সরাসরি কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি কেন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিলের সুনির্দিষ্ট কারণ এখনো প্রকাশ্যে আসেনি। গতকাল সোমবার খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইসমাইল হোসেনকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়েছিল। একই দিনে বিসিএস খাদ্য ক্যাডারের কর্মকর্তা ইলাহী দাদ খানকে চুক্তিভিত্তিক খাদ্যসচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।
দুর্নীতি মামলায় নাম
ইলাহী দাদ খান এর আগে ২০১৫ সালে দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত হয়েছিলেন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সেই বছর খাদ্য অধিদপ্তরের একটি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগে মামলা করেছিল। খাদ্য পরিদর্শক পদে ৪৪ জনকে নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে মামলাটি দায়ের করা হয়। এতে ৫৩ জনকে আসামি করা হয়েছিল, যার মধ্যে ইলাহী দাদ খানও ছিলেন। তিনি খাদ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক ও বিভাগীয় নির্বাচন কমিটির সভাপতি হিসেবে কাজ করছিলেন সেই সময়। মামলার অভিযোগ ছিল, মেধাবীদের বঞ্চিত করে অযোগ্যদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।
কী কারণে নিয়োগ বাতিল?
যদিও সরাসরি কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি, তবে ধারণা করা হচ্ছে যে ইলাহী দাদ খানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অতীত অভিযোগ হয়তো এই সিদ্ধান্তের পেছনে ভূমিকা রেখেছে। তবে এটি নিশ্চিত করা হয়নি, এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।
প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস
এদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পরিবর্তন আনা হয়েছে। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদসহ চারজন অতিরিক্ত সচিবকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাসের অংশ হিসেবে এই পরিবর্তনগুলো আনা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের প্রক্রিয়া
বাংলাদেশে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ একটি প্রচলিত প্রক্রিয়া যেখানে অবসরপ্রাপ্ত বা বিশেষ যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া হয় সরকারি বিভিন্ন পদে। তবে, ইলাহী দাদ খানের ক্ষেত্রে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগটি কেন বাতিল হলো, তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের পরদিনই তা বাতিল হওয়া একটি বিরল ঘটনা।
অতীতের প্রসঙ্গ
ইলাহী দাদ খানের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়টি আবারও সামনে এসেছে এই নিয়োগ ও বাতিলের পরিপ্রেক্ষিতে। যদিও তাঁকে ওই মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছিল, কিন্তু আদালতের রায় বা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়নি। তবে এটি স্পষ্ট যে, সেই সময়ের দুর্নীতির অভিযোগগুলো বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রভাব ফেলতে পারে।
ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্ত
এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য প্রশাসনিক পদক্ষেপের দিকনির্দেশনা এখনো অস্পষ্ট। মন্ত্রণালয় থেকে পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা বা ব্যাখ্যা দেওয়া হতে পারে।