চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বন্দরের ডলফিন জেটির কাছাকাছি কর্ণফুলী নদীতে অবস্থানরত ‘বাংলার জ্যোতি’ নামক একটি পণ্যবাহী জাহাজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টার দিকে জাহাজটিতে আগুন লাগে। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।
ফায়ার সার্ভিসের আগ্রাবাদ নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা মো. কফিল উদ্দিন জানান, কর্ণফুলী নদীতে অবস্থানরত ‘বাংলার জ্যোতি’ নামের জাহাজটিতে আগুন লাগার খবর পেয়ে তাদের বিভিন্ন স্টেশন থেকে মোট আটটি ইউনিট পাঠানো হয়েছে। আগ্রাবাদ, বন্দর, কর্ণফুলী ইপিজেড ও সিইপিজেড স্টেশন থেকে আগত ফায়ার সার্ভিসের দলগুলো আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
জাহাজে কীভাবে আগুন লাগল তা এখনো নিশ্চিত করে জানা যায়নি। তবে আগুন নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা দূর করতে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, জাহাজটির ইঞ্জিন কক্ষে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। তবে আগুন লাগার কারণ এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিশ্চিত হতে তদন্ত প্রয়োজন বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
জাহাজে লাগা আগুনের কারণে প্রচণ্ড ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়েছে, যা দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বিশেষ শ্বাসরোধী যন্ত্র ব্যবহার করে আগুন নেভানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ধোঁয়ার কারণে ঘটনাস্থলের আশপাশে মানুষের চলাচল সীমিত করা হয়েছে এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জাহাজটির আশপাশের এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করেছে।
এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, কর্ণফুলী নদীতে জাহাজটি থেকে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী আকাশে উঠে যাচ্ছে। অগ্নিকাণ্ডের কারণে পরিবেশ দূষণেরও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে নদীর পানিতে তেল ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। পরিবেশ ও স্থানীয় জলজ জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
জাহাজটিতে আগুন লাগার পরপরই জাহাজে থাকা কর্মীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি বন্দর কর্তৃপক্ষ ও নৌবাহিনীর সদস্যরাও উদ্ধার কাজে অংশ নিচ্ছেন। জাহাজে থাকা অন্যান্য পণ্যের ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য তাদের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে দেখা গেছে। এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি, তবে জাহাজটির ইঞ্জিন রুমসহ অন্যান্য অংশে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নৌবাহিনীর একটি সূত্র জানায়, তাদের একটি টিম ঘটনাস্থলে তৎপর রয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য জাহাজগুলোকে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে যেন তারা প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং ঘটনার আশপাশে জাহাজ চলাচল সীমিত রাখে।
পতেঙ্গা বন্দরে আগেও এ ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে পুরাতন এবং ত্রুটিপূর্ণ জাহাজগুলোতে আগুন লাগার ঝুঁকি বেশি থাকে। এই ধরনের ঘটনা এড়াতে ফায়ার সার্ভিস এবং বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগ নিয়মিত অগ্নিনিরাপত্তা মহড়া চালায়। তবে এত বড় পরিসরের একটি দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে আরও কঠোর অগ্নি প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে কর্তৃপক্ষ।
একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, জাহাজে অগ্নিকাণ্ড রোধে উন্নত অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত কর্মী, এবং নিয়মিত যন্ত্রপাতির রক্ষণাবেক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে কর্ণফুলী নদী ও বন্দর এলাকায় প্রচুর পণ্যবাহী জাহাজ নিয়মিত চলাচল করে, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
অগ্নিকাণ্ডের প্রকৃত কারণ উদঘাটনে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ফায়ার সার্ভিস, বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং নৌবাহিনী যৌথভাবে তদন্ত পরিচালনা করবে। প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে, ইঞ্জিন রুমে কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। এছাড়া জাহাজের জ্বালানির কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা অত্যন্ত সতর্কভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছেন। তাদের প্রধান লক্ষ্য হলো, আগুন যেন জাহাজের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে না পড়ে এবং সম্পদের আরও ক্ষতি না হয়। ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা জানান, এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত সাড়া দেওয়া ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। তিনি বলেন, “আমরা আমাদের সমস্ত ইউনিট সক্রিয় করেছি এবং আমাদের প্রথম কাজ হলো আগুন সম্পূর্ণভাবে নিভিয়ে ফেলা।”
এ ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো নির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি। তবে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনাটি সারাদেশের জন্য একটি সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করবে এবং ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা রোধে ব