ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ভোরে ডাকসুর সাবেক ভিপি এবং সাবেক সাংসদ সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। কানাডা থেকে ফেরার পথে ইমিগ্রেশন চেকপয়েন্টে তাকে আটক করা হয়। তার আটকের পরপরই বিভিন্ন মহলে আলোচনা এবং জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে।
সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডায় ভ্রমণে ছিলেন। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তিনি ছাত্র আন্দোলনের অনেক আগে থেকেই দেশের বাইরে অবস্থান করছিলেন। তবে দেশে ফেরার দিনই তাকে ইমিগ্রেশন চেকপয়েন্ট থেকে আটক করা হয়, যা অনেকের কাছে আকস্মিক এবং বিস্ময়কর বলে প্রতীয়মান হয়েছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক জানান, “কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে আটক করা হয়েছে। আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবো এবং কোথায় কী অভিযোগ রয়েছে তা যাচাই-বাছাই করবো।” তবে পুলিশের পক্ষ থেকে সুলতান মনসুরের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ এখনও প্রকাশ করা হয়নি।
সুলতান মনসুরের পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তার বিরুদ্ধে কোনও মামলা বা অভিযোগ নেই। তারা আরও উল্লেখ করেছেন যে, তিনি একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাইরে অবস্থান করছিলেন, যার ফলে কোনও ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তার সরাসরি সংশ্লিষ্টতা নেই। পরিবারের সদস্যরা তার আটকের বিষয়টি নিয়ে হতবাক এবং উদ্বিগ্ন।
সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি। তিনি তার সময়ে একজন শক্তিশালী ছাত্রনেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। পরে তিনি জাতীয় সংসদের একজন নির্বাচিত সদস্যও হন। তার রাজনৈতিক জীবন বেশ বৈচিত্র্যময় এবং তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
ডাকসুর ভিপি হিসেবে তার ভূমিকা এবং ছাত্ররাজনীতিতে তার অবদান বিশেষভাবে স্মরণীয়। তিনি ছাত্রদের অধিকার আদায়ের জন্য বিভিন্ন আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, যা তাকে একটি দৃঢ় এবং সাহসী রাজনৈতিক নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তিনি রাজনৈতিক পরিসরে কম সক্রিয় ছিলেন এবং মূলত বিদেশে অবস্থান করছিলেন।
যদিও ডিবি জানিয়েছে, সুলতান মনসুরকে কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে আটক করা হয়েছে, তবে এসব অভিযোগ কী, তা এখনও পরিষ্কার নয়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে বলে জানানো হয়েছে, কিন্তু এর বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি। সাধারণত, এ ধরনের উচ্চপ্রোফাইল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের আটকের পেছনে বিভিন্ন রাজনৈতিক বা সামাজিক কারণ থাকতে পারে, তবে এ ক্ষেত্রে বিষয়টি এখনও অস্পষ্ট।
সুলতান মনসুরের আটকের খবরে সামাজিক মাধ্যমে এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলে প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এটি একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পদক্ষেপ হতে পারে। অন্যদিকে, কিছু মানুষ এটিকে সুলতান মনসুরের বিরুদ্ধে নতুন কোনও আইনি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দেখছেন।
সামাজিক মাধ্যমে বেশ কিছু পোস্ট এবং মন্তব্যে তার সমর্থকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং তারা মনে করছেন, সুলতান মনসুরের আটকের পেছনে রাজনৈতিক কারণ থাকতে পারে। অনেকেই দাবি করছেন, এটি তার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের ষড়যন্ত্রের ফল। তবে এ ধরনের দাবির কোনও প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি।
ডিবি জানিয়েছে, তারা সুলতান মনসুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ যাচাই-বাছাই করছে এবং তাকে যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আটকের পর আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তাকে আদালতে তোলা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনও নির্দিষ্ট মামলা বা অভিযোগ দায়েরের খবর পাওয়া যায়নি।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি না আসায় তার আটকের পেছনের আসল কারণ নিয়ে সবার মনে ধোঁয়াশা রয়ে গেছে।
সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদের আটকের ঘটনা দেশের রাজনৈতিক পরিসরে একটি আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে। ছাত্রনেতা থেকে সংসদ সদস্য হয়ে ওঠা এই নেতার রাজনৈতিক জীবন বরাবরই আলোচিত এবং সমালোচিত। তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এখনও পরিষ্কার নয়, তবে তার আটকের ঘটনা অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টি তদন্ত করছে এবং তার জিজ্ঞাসাবাদের পর হয়তো আরও তথ্য পাওয়া যাবে।