বাংলাদেশ ও ভারতের ফুটবল লড়াই, বিশেষত বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টগুলোতে, বরাবরই উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে থাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। ২০২৪ সালের সাফ অনূর্ধ্ব-১৭ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনালে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারত। থিম্পুর চাংলিমিথাং স্টেডিয়ামে সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় অনুষ্ঠিত হবে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচটি, যেখানে ট্রফি জয়ের স্বপ্ন নিয়ে মাঠে নামবে দুই দল। তবে প্রশ্ন থেকে যায়—ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জিততে পারবে বাংলাদেশ?
সাফের বিভিন্ন বয়সভিত্তিক আসরে ভারত ও বাংলাদেশের মুখোমুখি লড়াই প্রায়শই উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, সাফ অনূর্ধ্ব-২০ টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ ভারতকে সেমিফাইনালে পরাজিত করে ফাইনালে নেপালের বিপক্ষে শিরোপা নিশ্চিত করেছিল। সেবার মারুফুল হকের দল ভারতের বিপক্ষে দারুণ এক কৌশলগত জয় তুলে নিয়েছিল, যা এখনো অনুপ্রেরণার উৎস।
তবে এবার ফাইনালে উঠেছে অনূর্ধ্ব-১৭ দল, যেখানে গ্রুপ পর্বে তারা ভারতের কাছে হেরেছিল। যদিও ফাইনালে কোচ সাইফুল বারী টিটুর দল আরও ভালো পারফরম্যান্সের আশায় রয়েছে। সেমিফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে টাইব্রেকারে জয় ছিনিয়ে নেওয়ার পর বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা ফাইনালের জন্য আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে। সাইফুল বারী নিজেও বলেন, “ছেলেদের নিয়ে আমি গর্বিত। পাকিস্তান ম্যাচে তারা যেভাবে পিছিয়ে থেকেও ঘুরে দাঁড়িয়েছে, তা আমাদের আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছে।”
ফাইনালে ভারতের মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে বাংলাদেশকে মাঠে নামতে হবে। ভারতীয় দল অপরাজিত থেকে ফাইনালে উঠেছে এবং সেমিফাইনালে নেপালকে ৪-২ গোলে হারিয়ে দারুণ ছন্দে রয়েছে। ভারতের কোচ ইশফাক আহমেদ জানিয়ে দিয়েছেন যে, বাংলাদেশকে তারা কোনওভাবেই সহজভাবে নিচ্ছেন না। তার মতে, “ফাইনালে সবসময়ই অতিরিক্ত চাপ থাকে। বাংলাদেশ একটি ভালো দল এবং আমি আশা করি ম্যাচটি উপভোগ্য হবে।”
অপরদিকে, বাংলাদেশের কোচ সাইফুল বারী টিটু স্বীকার করেছেন যে, ভারত এই ম্যাচের ফেভারিট। তবে তিনি আরও বলেন, “ফাইনাল খেলতে নামলে শুধু অংশগ্রহণ করাই লক্ষ্য হতে পারে না। আমাদের লক্ষ্য শিরোপা জয়। জানি কাজটি কঠিন, কিন্তু ভারত কীভাবে খেলে তা আমরা জানি। তাদের সঙ্গে লড়াই করতে হলে আমাদের সেরা ফুটবল খেলতে হবে।”
ভারতের শক্তিমত্তার দিকে তাকালে তাদের আক্রমণভাগ বিশেষভাবে নজরকাড়া। সেমিফাইনালে নেপালের বিপক্ষে চারটি গোল করে তারা নিজেদের আক্রমণাত্মক দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছে। ভারতের আক্রমণের মূল ভিত্তি তাদের দলগত খেলা, যেখানে ফ্ল্যাঙ্ক থেকে আক্রমণ করা এবং মধ্যমাঠে বলের নিয়ন্ত্রণ রাখা তাদের প্রধান কৌশল। এ ছাড়া তাদের ডিফেন্সও বেশ অভিজ্ঞ এবং দৃঢ়, যা বাংলাদেশকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে।
বাংলাদেশের জন্য ফাইনালে সফল হওয়ার মূল চাবিকাঠি হবে তাদের ডিফেন্সিভ ব্লক শক্তিশালী করা এবং প্রতিআক্রমণে দ্রুতগতিতে আক্রমণ করা। পাকিস্তানের বিপক্ষে টাইব্রেকারে জয় তুলে নেওয়ার পর আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে, তবে ভারতের বিপক্ষে জিততে হলে রক্ষণভাগে ভুল কমাতে হবে এবং আক্রমণভাগে কার্যকরী হতে হবে। বাংলাদেশকে বিশেষত ফাইনালে তাদের কৌশলগত শৃঙ্খলা বজায় রেখে খেলতে হবে। ভারতের অভিজ্ঞতার সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্য কৌশলগত চিন্তাভাবনা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে আরও সতর্ক থাকতে হবে।
ফাইনাল ম্যাচে সাধারণত দুই দলের খেলোয়াড়দের ওপর মানসিক চাপ থাকে অনেক বেশি। বাংলাদেশ দলকে এই মানসিক চাপ সামলাতে হবে। তবে পাকিস্তানের বিপক্ষে দারুণ প্রত্যাবর্তন ফাইনালে তাদের মানসিকভাবে আরও দৃঢ় করেছে। সাইফুল বারী বলেন, “পাকিস্তান ম্যাচের অভিজ্ঞতা আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে। ছেলেরা জানে কীভাবে কঠিন পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়াতে হয়।”
অন্যদিকে, ভারতের কোচ ইশফাক আহমেদের মতে, ফাইনালে সবসময়ই মানসিক চাপ বেশি থাকে। তবে ভারতীয় দলের অভিজ্ঞতা এবং ফর্মের ভিত্তিতে তারা আত্মবিশ্বাসী। “আমরা জানি, বাংলাদেশ সহজ প্রতিপক্ষ নয়। ফাইনালে আমরা আমাদের সেরা ফুটবল খেলার চেষ্টা করব,” বলেন ইশফাক আহমেদ।
যদিও ভারত শক্তিশালী দল এবং তাদের ফর্ম ফাইনালের আগে অনেকটাই আশাব্যঞ্জক, তবে বাংলাদেশ কখনই হাল ছাড়ার মতো দল নয়। তাদের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে কষ্টার্জিত জয় তাদের মানসিক দৃঢ়তা প্রমাণ করেছে। এছাড়া, বাংলাদেশ দল ফাইনালে নিজেদের উজাড় করে দিতে চাইবে, কারণ তারা জানে শিরোপা জয়ের সুযোগ বারবার আসে না।
কৌশলগতভাবে যদি বাংলাদেশ আক্রমণভাগে আরও কার্যকরী হতে পারে এবং ডিফেন্সকে শক্তিশালী রাখতে পারে, তবে তারা ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জিততে সক্ষম হতে পারে। তবে ভারতের আক্রমণভাগ ও অভিজ্ঞতাকে মোকাবিলা করতে হলে বাংলাদেশকে তাদের সেরা ফুটবল খেলতে হবে।
ভার