গত দুই বছরে বিদেশি ফলের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। আপেল, মাল্টা, কমলা, আঙুর ও আনারের মতো ফলগুলো একসময় জনপ্রিয় হলেও এখন সেগুলোর চাহিদা কমে গেছে। ক্রেতারা ফল কেনা সীমিত করে ফেলেছেন, ফলে ফলের বাজারে ক্রেতা সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। এই পরিস্থিতির পেছনে বেশ কিছু মূল কারণ বিদ্যমান, যা সাধারণ মানুষকে এই প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাদ্য থেকে বঞ্চিত করছে। ফলের দোকানগুলো ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়েছে, বিশেষ করে চট্টগ্রামের ফলবাজারগুলোতে এই চিত্রটি স্পষ্ট।
ফল আমদানিকারক এবং ব্যবসায়ীদের মতে, মূলত তিনটি কারণের জন্য বিদেশি ফলের দাম বেড়েছে:
- আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি: ২০২২ সালের জুন-জুলাই থেকে সরকার আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি করেছে, যা ফল আমদানিকে ব্যয়বহুল করেছে। ফলশ্রুতিতে আমদানিকারকরা উচ্চ শুল্কের কারণে অতিরিক্ত ব্যয় মেটাতে বাধ্য হয়েছেন।
- ডলার সংকট: দেশের ডলার সংকট আরও একটি বড় কারণ, যার ফলে আমদানিকারকরা বিদেশি মুদ্রা সংগ্রহ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। ডলারের অপ্রতুলতা এবং এর ওপর নির্ভরশীল আমদানিকারকদের উচ্চ বিনিময় হারে ডলার সংগ্রহ করতে হচ্ছে।
- ডলারের মূল্য বৃদ্ধি: ডলারের মূল্য বৃদ্ধি এবং এর সাথে সংযুক্ত আমদানি খরচও বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদেশ থেকে ফল আনতে হলে ডলারে মূল্য পরিশোধ করতে হয়, যা এখনকার বাজারে বেশ ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিদেশি ফলের আমদানির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায়, ২০২৩-২৪ সালে প্রায় ১০ হাজার টন ফল কম আমদানি করা হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট ৮ লাখ ২২ হাজার টন ফল আমদানি হয়েছিল, যা গত দুই অর্থবছরে ২ লাখ ৩৩ হাজার টন কমে গেছে।
আমদানি খরচ বৃদ্ধি ক্রেতাদের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলেছে। আমদানি খরচ এবং শুল্ক বৃদ্ধির কারণে ফলের খুচরা মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। আপেল, মাল্টা, আঙুর, কমলা এবং আনারের মতো ফলগুলো ক্রেতাদের ব্যয়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলছে। উদাহরণস্বরূপ, আপেল ক্রয়ে ২০২৩ অর্থবছরে ক্রেতারা গড়ে ৪ হাজার ৭৪৬ কোটি টাকা ব্যয় করেছেন, যেখানে মাল্টা ক্রয়ে খরচ হয়েছে ৪ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা। এভাবে সবমিলিয়ে ক্রেতারা ফল কেনায় খরচ করেছেন প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা।
দেশে ফল উৎপাদন ক্রমশ বাড়ছে এবং বিদেশি ফলের পরিবর্তে দেশি ফলের দিকে ক্রেতাদের ঝোঁক বাড়ছে। কৃষিবিদরা বলছেন, ফলের দেশীয় উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি এবং বিদেশি ফলের আবাদ দেশে প্রভাব ফেলেছে। পাশাপাশি আমদানি করা ফলের চাহিদাও কমে গেছে।
নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ ফল কিনতে এখন হিমশিম খাচ্ছেন। চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর চৌমুহনী বাজারের খুচরা ফল বিক্রেতা নুরুল আবছারের মতে, “বিদেশি ফলের দাম এত বেশি যে নিম্ন এবং মধ্যবিত্তরা এখন এই ফলগুলো ক্রয় করতে পারছেন না।” ফলের দাম বৃদ্ধি এবং নিম্নবিত্ত মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাসের ফলে অনেকেই ফল কিনতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।
ডলার সংকট, শুল্ক বৃদ্ধি, এবং আমদানি খরচ বাড়ার কারণে দেশে বিদেশি ফলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের জন্য বিদেশি ফল ক্রয় করা কঠিন হয়ে পড়েছে।