পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) নির্বাচক পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন মোহাম্মদ ইউসুফ। দায়িত্ব নেয়ার মাত্র ছয় মাসের মাথায় নিজের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন পাকিস্তানের এই কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান। আজ ২৯শে সেপ্টেম্বর, বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেছে পিসিবি। ইউসুফ তার পদত্যাগের পেছনে ‘ব্যক্তিগত কারণ’ উল্লেখ করেছেন, তবে তিনি বোর্ডের সঙ্গে অন্য ভূমিকায় কাজ চালিয়ে যাবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।
ইউসুফ নির্বাচক পদ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার পেছনে ব্যক্তিগত কারণ দেখালেও, ক্রিকেট বিশ্লেষকদের একাংশ ধারণা করছেন, এর পেছনে কিছু কৌশলগত কারণও থাকতে পারে। চলতি বছরের জুনে পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আশানুরূপ ফল না হওয়ায় নির্বাচক কমিটি নিয়ে নানা আলোচনা হয়। সেই সময় সাবেক ফাস্ট বোলার ওয়াহাব রিয়াজকে নির্বাচক পদ থেকে সরিয়ে দেয় পিসিবি, এবং তখন থেকেই নির্বাচক পদের উপর বাড়তি চাপ ছিল। ওয়াহাব রিয়াজের পরিবর্তে নির্বাচক কমিটিতে ইউসুফকে জায়গা দেয়া হলেও দলের পারফরম্যান্সের উন্নতি হয়নি।
ইউসুফের পদত্যাগের খবরে পিসিবি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “মোহাম্মদ ইউসুফের অমূল্য অবদানকে আমরা গভীরভাবে শ্রদ্ধা জানাই। নির্বাচক কমিটির সদস্য হিসেবে তার যে অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান তিনি দিয়েছেন, তা পাকিস্তান ক্রিকেটের উন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।” তবে ইউসুফকে এখনও হাই পারফরম্যান্স সেন্টারের ব্যাটিং কোচ হিসেবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য রাখা হয়েছে। এ নিয়ে পিসিবি আরও বলেছে, “ইউসুফের গভীর ব্যাটিং জ্ঞান ও দক্ষতা তরুণ খেলোয়াড়দের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এবং ভবিষ্যতেও রাখবে।”
নিজের পদত্যাগের ঘোষণা দিতে গিয়ে ইউসুফ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স (পূর্বে টুইটার) এ লিখেছেন, “ব্যক্তিগত কারণে পাকিস্তান ক্রিকেট দলের নির্বাচক পদ থেকে পদত্যাগ ঘোষণা করছি। এই অবিশ্বাস্য দলের জন্য কাজ করা আমার বিশেষ সুযোগ ছিল। পাকিস্তান ক্রিকেটের উন্নতি ও সফলতায় আমি যে সামান্য অবদান রাখতে পেরেছি, তা আমার জন্য গর্বের বিষয়।” ইউসুফ আরও উল্লেখ করেন যে তিনি ক্রিকেটের প্রতি তার নিবেদন অব্যাহত রাখবেন এবং ক্রিকেটের উন্নয়নের জন্য নিজের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগাবেন।
মার্চ ২০২৪ সালে নির্বাচক হিসেবে দায়িত্ব নেন মোহাম্মদ ইউসুফ। তার দায়িত্বকালে পাকিস্তান দলে কিছু তরুণ খেলোয়াড়ের সুযোগ মিলেছিল, এবং তিনি দলের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নিজেদের মতামত বেশ সক্রিয়ভাবে প্রকাশ করেছিলেন। বিশেষ করে, ব্যাটিং বিভাগে নতুন কৌশল ও পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করার বিষয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি ছিল স্পষ্ট। তবে দলের সামগ্রিক পারফরম্যান্সের উন্নতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। তবুও, নির্বাচক কমিটির অংশ হিসেবে তিনি দল গঠনে যে ভূমিকা রেখেছিলেন, তা ক্রিকেট ভক্তরা ভুলবে না।
ক্রিকেট বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইউসুফের পদত্যাগ পাকিস্তান ক্রিকেট দলের ভবিষ্যত নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বড় প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে, যেহেতু ইউসুফ একজন বিশাল অভিজ্ঞতার অধিকারী ছিলেন এবং তরুণ ব্যাটসম্যানদের উন্নতিতে সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রেখেছিলেন, তার পদত্যাগ নির্বাচক কমিটির নতুন সদস্যদের ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি করতে পারে। অনেকেই মনে করেন, ইউসুফের বিদায় এমন সময় এল যখন পাকিস্তান ক্রিকেটের একটি স্থিতিশীল নির্বাচনী কমিটির প্রয়োজন ছিল।
ইউসুফের বিদায় পিসিবির জন্য একটি বড় ধাক্কা। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে দলের পারফরম্যান্স উন্নত করার জন্য বোর্ড নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল, যার মধ্যে ইউসুফের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। নির্বাচক কমিটির অভ্যন্তরে আরও পরিবর্তন আসতে পারে বলে ধারণা করছেন ক্রিকেট বিশ্লেষকরা। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু নাম শোনা যাচ্ছে যারা হয়তো ইউসুফের স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন।
মোহাম্মদ ইউসুফ পাকিস্তান ক্রিকেটের ইতিহাসে অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিত। ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেয়ার আগে তিনি ৯০টি টেস্ট এবং ২৮৮টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন। তার ব্যাটিং দক্ষতা এবং খেলোয়াড়ি মানসিকতা তাকে সবসময়ই ভিন্ন মাত্রায় স্থান দিয়েছে। অবসরের পর কোচিং ও ক্রিকেট বিশ্লেষণের কাজেও বেশ সফলভাবে যুক্ত ছিলেন তিনি। হাই পারফরম্যান্স সেন্টারের ব্যাটিং কোচ হিসেবে তার কাজকে ইতিমধ্যেই প্রশংসিত করা হচ্ছে।
ইউসুফ বর্তমানে পিসিবির হাই পারফরম্যান্স সেন্টারে কাজ চালিয়ে যাবেন। নির্বাচকের পদ থেকে সরে আসলেও, তিনি পাকিস্তান ক্রিকেটের উন্নয়নে নিবে