সম্প্রতি রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম উবার এবং পাঠাওয়ের বিরুদ্ধে গুরুতর অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। দেশের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মাসুদ আহমেদ রাইড শেয়ারিং কোম্পানি দুটির বিরুদ্ধে এ বিষয়ে একটি আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন। অভিযোগ অনুযায়ী, রাইড শেয়ারিং বিধিমালা ২০১৭ লঙ্ঘন করে উবার এবং পাঠাও বিগত আট বছরে ৩০ থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
আইনি নোটিশে বলা হয়েছে, রাইড শেয়ারিং সেবায় যুক্ত মাইক্রোবাস, সিএনজি অটোরিকশা, মোটরসাইকেলসহ প্রায় দেড় লাখ পরিবহন প্ল্যাটফর্মগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে। এই বাহনগুলো মূলত যাত্রী পরিবহন, পণ্য ডেলিভারি এবং খাবার সরবরাহ করে। তবে নোটিশে অভিযোগ করা হয়েছে, রাইড শেয়ারিং বিধিমালায় এ ধরনের চার্জের কোনো উল্লেখ না থাকলেও উবার এবং পাঠাও বিভিন্ন ফি এবং কমিশনের নামে চালকদের কাছ থেকে অর্থ আত্মসাৎ করছে।
উবার এবং পাঠাও উভয়ই চালকদের আয়ের ওপর ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কমিশন কেটে নিচ্ছে, যা “অ্যাডভান্স প্ল্যাটফর্ম ফি”, “সার্ভিস চার্জ”, “বুকিং ফি”, এবং “ট্যাক্স” হিসেবে দেখানো হয়। নোটিশে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, একজন চালক যদি একদিনে ৩,০০০ টাকা আয় করেন, তবে তার থেকে প্রায় ১,০০০ টাকা কোম্পানি বিভিন্ন চার্জের নামে কেটে নিচ্ছে।
নোটিশের ভিত্তিতে আরও জানা যায়, চালকদের কাছে কমিশন ও ফি কেটে নেওয়ার এই কার্যক্রম একটি প্রতারণামূলক পদ্ধতি। যদিও রাইড শেয়ারিং বিধিমালায় এই ধরনের চার্জ আরোপের কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই, কোম্পানিগুলো নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী এসব ফি আদায় করছে, যা সম্পূর্ণ বেআইনি বলে দাবি করা হয়েছে।
চালকরা দীর্ঘদিন ধরেই এই অনৈতিক চার্জ এবং কমিশন নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছেন। একজন মোটরসাইকেল চালক জানান, “দিনের পরিশ্রমের তুলনায় যা পাই, তা অত্যন্ত কম। উবার বা পাঠাও, যার মাধ্যমেই যাই, আমার আয়ের একটা বড় অংশ তারা নিয়ে নিচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের আর গাড়ি চালানোর উপায় থাকবে না।”
চালকরা আরও জানান, প্রতিদিনের আয় থেকে এত বেশি চার্জ কেটে নেওয়ার ফলে তাদের জীবিকার মান কমে যাচ্ছে এবং অনেক চালক বাধ্য হয়ে পেশা পরিবর্তনের কথা ভাবছেন। এছাড়াও, পরিবহন খাতের বিভিন্ন সংগঠন উবার ও পাঠাওয়ের বিরুদ্ধে নীতিমালা লঙ্ঘন এবং শোষণমূলক আচরণের জন্য সমালোচনা করেছে।
নোটিশে উবার ও পাঠাওকে ১৫ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এই সময়সীমার মধ্যে সন্তোষজনক জবাব না পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আইনি পদক্ষেপের মধ্যে কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের, ক্ষতিপূরণ দাবি, এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
আইনজীবী মাসুদ আহমেদ বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হলো চালকদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করা এবং রাইড শেয়ারিং সেবা ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনা। উবার এবং পাঠাও যেভাবে বেআইনিভাবে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে, তা দেশের অর্থনৈতিক পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।”
বাংলাদেশে রাইড শেয়ারিং সেবা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ঢাকা শহরে যানজটের সমস্যার কারণে এই সেবা অনেকের জন্য সুবিধাজনক। তবে এই খাতের জন্য যে নীতিমালা রয়েছে, তা সুষ্ঠুভাবে কার্যকর করা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ রয়েছে।
চালক এবং যাত্রী উভয়ের দাবি, রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম মনিটর করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না থাকায় তারা ইচ্ছেমতো চার্জ এবং ফি আরোপ করতে পারছে। এছাড়া, এই খাতের জন্য সুনির্দিষ্ট মানদণ্ড না থাকায় কোম্পানিগুলো চালকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হচ্ছে।
অনেকে মনে করেন, রাইড শেয়ারিং সেবার ওপর সরকারের কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেন, এই খাতের ওপর অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ আরোপ করলে ব্যবসা পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়তে পারে।
উবার এবং পাঠাওয়ের পক্ষ থেকে এখনও এই নোটিশের ব্যাপারে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে কোম্পানিগুলো দাবি করে থাকে যে, তারা সব সময় চালকদের সঠিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে চেষ্টা করছে।
উবার ও পাঠাওয়ের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ তাদের ব্যবসায়িক মডেলকে বৈধ ও স্বচ্ছ বলে দাবি করে থাকে এবং তারা চালকদের সুবিধার কথা মাথায় রেখেই সেবা পরিচালনা করছে বলে জানায়। তবে নোটিশের প্রেক্ষিতে কোম্পানিগুলো কী পদক্ষেপ নেবে, তা সময়ই বলে দেবে।
উবার এবং পাঠাওয়ের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের ফলে রাইড শেয়ারিং সেবা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। চালকদের আয় থেকে কমিশন কেটে নেওয়া এবং সেবার বিনিময়ে বাড়তি ফি আদায় করা নিয়ে যে অসন্তোষ তৈরি হয়।