ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলায় লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ নিহত হওয়ার পর মুসলিম বিশ্বকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। ইরানের শীর্ষ নেতা এই ডাকে মুসলিম দেশগুলিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম রয়টার্সের বরাত দিয়ে জানা যায়, এই হামলার পরই খামেনি এই সাহসী ও তীব্র বার্তা দিয়েছেন।
এক বিবৃতিতে আয়াতুল্লাহ খামেনি বলেন, “আপনারা লেবাননের পাশে দাঁড়ান। দুষ্ট শাসনের (ইসরায়েল) বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গর্বিত হিজবুল্লাহ আমাদের বন্ধু।” তিনি হিজবুল্লাহর সংগ্রামী ভূমিকার প্রশংসা করেন এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। খামেনি আরও উল্লেখ করেন, এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে প্রতিরোধ যোদ্ধারাই, এবং সেই প্রতিরোধের নেতৃত্ব দেবে হিজবুল্লাহ।
এই ঘটনার পর ইরানের সামরিক নেতৃত্ব এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। ইরানি মিডিয়ার মতে, এই হামলায় হিজবুল্লাহ প্রধানের পাশাপাশি ইরানের বিপ্লবী গার্ডের ডেপুটি কমান্ডার জেনারেল আব্বাস নীলফরৌশানও নিহত হন। খামেনির এই বক্তব্য শুধু ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নয়, মুসলিম বিশ্বকে একটি ঐক্যবদ্ধ ফ্রন্ট তৈরি করতে উদ্বুদ্ধ করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান এই হামলার জন্য ইসরায়েলের পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেও আংশিকভাবে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে উন্নত অস্ত্র সরবরাহ করে আসছে, যা এ ধরনের আক্রমণকে সম্ভব করেছে। পেজেশকিয়ান বলেন, “আমেরিকানরা ইহুদিবাদীদের সঙ্গে তাদের জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করতে পারে না।”
এছাড়াও, ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (পূর্বের টুইটার) পোস্ট করে ঘোষণা দেন যে, নাসরাল্লাহর দেখানো পথ অনুসরণ করা হবে। তিনি বলেন, “জেরুজালেমের মুক্তির মাধ্যমে তার পবিত্র লক্ষ্য বাস্তবায়িত করা হবে।”
নাসরাল্লাহর মৃত্যুর পর খামেনির নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে এবং তাকে ইরানের অভ্যন্তরে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ইসরায়েলের হামলার পর পরই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ইরানি কর্মকর্তারা। রয়টার্সের দুই কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলা হয়, ইরানের ভেতরে নিরাপত্তা পরিস্থিতি এখন বেশ কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
শুক্রবার লেবাননের দক্ষিণ বৈরুতে ইসরায়েলি বোমা হামলায় হিজবুল্লাহর প্রধান নাসরাল্লাহসহ আরও কয়েকজন সিনিয়র নেতা নিহত হন। ইসরায়েলের নিরাপত্তা বাহিনী জানায়, তাদের পরিকল্পিত আক্রমণে শুধুমাত্র হিজবুল্লাহর প্রধানই নয়, ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীটির দক্ষিণ ফ্রন্টের কমান্ডারসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নেতারাও মারা গেছেন।
নাসরাল্লাহ গত ৩২ বছর ধরে হিজবুল্লাহর নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। তার নেতৃত্বে হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে এবং প্রতিটি আক্রমণই ছিল তার সরাসরি নির্দেশে। তার মৃত্যুর ফলে হিজবুল্লাহর ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব এবং কার্যক্রমে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
এই ঘটনার পর মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক এবং সামরিক পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ইরান, লেবানন এবং অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলোতে নতুন করে সংঘাতের আশঙ্কা বাড়ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও এ বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া লক্ষণীয় হতে পারে, যা মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে।
হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহর মৃত্যু মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে একটি টার্নিং পয়েন্ট হিসাবে দেখা হচ্ছে। আয়াতুল্লাহ খামেনির আহ্বান মুসলিম বিশ্বকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা হিসেবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। ইসরায়েলের এই সামরিক পদক্ষেপ এবং ইরানের পাল্টা প্রতিক্রিয়া ভবিষ্যতে নতুন সংঘাতের ইঙ্গিত দিচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।