বাংলাদেশের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যবিষয়ক উপকমিটি শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) প্রাথমিকভাবে ঘোষণা করেছে যে, জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানে নিহত ১,৫৮১ জনের একটি তালিকা তারা প্রাথমিকভাবে সংগ্রহ করেছে। এই তথ্যগুলো যাচাই-বাছাইয়ের পরে চূড়ান্ত প্রতিবেদন হিসেবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য উপস্থাপন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দীন পাটোয়ারী লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। তিনি বলেন, “বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পক্ষ থেকে গঠিত স্বাস্থ্যবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটি এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির যৌথ প্রচেষ্টায় সারা দেশে আন্দোলনে শহীদ ব্যক্তিদের একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরি করা হয়েছে। আমাদের প্রাথমিক তালিকায় মোট ১ হাজার ৫৮১ জন ব্যক্তির তথ্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন যে এই তালিকা তৈরি এবং তথ্য সংগ্রহের কাজে সহায়তা করেছে বেশ কয়েকটি মানবাধিকার ও জনসেবামূলক সংস্থা। এই সংস্থাগুলোর মধ্যে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন, হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি এবং রেড জুলাই প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যক্তিরাও তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।
স্বাস্থ্য বিষয়ক উপকমিটির সদস্য সচিব তারেক রেজা এই তালিকা প্রসঙ্গে বলেন, “স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ৭১৭ জনের একটি প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তবে আমাদের সংগ্রহ করা তালিকাটি বৃহত্তর। এখন আমরা এ তথ্য যাচাই-বাছাই করছি এবং যাচাইয়ের পরে চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি মন্ত্রণালয়ে জমা দেব।”
তিনি আরও জানান, “তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আমাদের প্রাথমিক তালিকাটি প্রতিটি জেলায় জেলা প্রশাসকদের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে। এই কমিটিগুলো প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের পরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে চূড়ান্ত তালিকা প্রেরণ করবে।”
উপকমিটির সদস্যরা জানান, স্থানীয় পর্যায় থেকে পাওয়া তথ্য এবং প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীদের বিবরণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বিভিন্ন জেলার স্থানীয় প্রশাসন, নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ, এবং মানবাধিকার কর্মীদের সহায়তায় এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। “আমরা তাদের অবদানের জন্য কৃতজ্ঞ,” বলেন উপকমিটির একজন সদস্য।
তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের প্রক্রিয়ায় বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে বলে জানান তারেক রেজা। “আমরা অনেক জায়গায় সঠিক তথ্য সংগ্রহে কিছু বাধার সম্মুখীন হয়েছি। বিশেষ করে দূর্গম এলাকাগুলোতে তথ্য সংগ্রহ করা বেশ কঠিন ছিল। তবে স্থানীয় প্রশাসন ও সুশীল সমাজের সহযোগিতায় আমরা এই চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠেছি।”
তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পরে, তা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ে প্রকাশ করা হবে। এই তথ্যগুলোর সাথে মন্ত্রণালয়ের পূর্বে প্রকাশিত ডাটাবেজকে সমন্বিত করা হবে। স্বাস্থ্যবিষয়ক উপকমিটি আশা প্রকাশ করে যে, চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হবে এবং তা নাগরিকদের জন্য সহজলভ্য হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা আরও উল্লেখ করেন যে, নিহতদের স্মরণে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। নিহতদের স্মৃতিকে সম্মান জানাতে একটি স্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের প্রস্তাবও উঠেছে। এছাড়াও তাদের পরিবারগুলোকে নানামুখী সহযোগিতা দেওয়ার বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, “নিহতদের পরিবারের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করতে সরকারকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। শহীদদের জন্য যথাযথ মর্যাদার ব্যবস্থা করা জরুরি।”
স্বাস্থ্যবিষয়ক উপকমিটি তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। তারা আগামী দিনে আরও তথ্য সংগ্রহের কাজ চালিয়ে যাবে এবং নিহতদের সংখ্যা ও পরিচয় সম্পর্কে সঠিক তথ্য সংগ্রহে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে। এছাড়া শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও তাদের পরিবারের পুনর্বাসনের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি চালু করার পরিকল্পনাও প্রকাশ করেছেন।
এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের প্রতি সম্মান জানানো হয়েছে। তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে এই সংখ্যা চূড়ান্ত করা হবে এবং তা দেশের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে বিবেচিত হবে।