সকলের কণ্ঠ প্রতিনিধি :
নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার স্বল্প শুনই গ্রামের ৯০ বছর বয়সী অসহায় বৃদ্ধা খোদেজা বেগমের জীবন যেন কষ্টের এক নিদারুণ অধ্যায়। সামান্য খাবারের সংস্থান হলে খেয়ে দিন কাটান, আর না হলে অনাহারে কাটাতে হয় এই বৃদ্ধাকে। এত বছর বয়স হলেও, খোদেজার জীবনের সঙ্গে লড়াই করার শক্তি এখনো ফুরিয়ে যায়নি, তবে তাঁকে সাহায্য করার জন্য নেই কোনো স্বামী, সন্তান, কিংবা স্থানীয় প্রশাসনের কোনো সাড়া।
খোদেজার জীবন আজীবন সংগ্রামের আর দুর্ভোগের চক্রে আবদ্ধ। স্বামী-সন্তানবিহীন এই বৃদ্ধা নিজের জীবনের সবকিছু হারিয়ে একাকীত্বের কষ্ট নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। জীবনের শেষ সময়ে এসে তাঁর পাশে নেই সমাজের কেউ, নেই কোনো প্রিয়জন কিংবা সরকারি সহযোগিতা। স্থানীয় মানুষেরাও তাঁর কষ্টের বাস্তবতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হলেও তাঁকে সাহায্য করতে খুব একটা এগিয়ে আসেন না।
৯০ বছর বয়সী বৃদ্ধার একলা জীবন
খোদেজার জীবন যেন কষ্টের এক অবিচ্ছিন্ন অধ্যায়। বিয়ের পিঁড়িতে বসলেও তার সংসার স্থায়ী হয়নি। সংসার ভেঙে যাওয়ার পর থেকেই খোদেজা একাকী জীবনযাপন শুরু করেন, যা তাঁকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে। দিন দিন তাঁর শারীরিক ও মানসিক অবস্থা আরও খারাপের দিকে যেতে থাকে। তাঁর নিজের কোনো ঘর-বাড়ি নেই, এমনকি থাকার মতো কোনো নির্দিষ্ট জায়গাও নেই। তবে সমাজের কিছু সহানুভূতিশীল মানুষ তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন, যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন সাইফুল ফকির, যিনি তাঁকে তাঁর জরাজীর্ণ ঘরে থাকার সুযোগ করে দিয়েছেন। তাছাড়া স্থানীয় আব্দুল হালিম তালুকদারও নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য করছেন।
সবার অগোচরে এক কষ্টময় জীবন
স্থানীয় মানুষের মতে, খোদেজার জীবনযাপন কতটা কষ্টের, তা না দেখলে কেউ বিশ্বাস করতে পারবে না। দিন শেষে একটু খাবার জুটলে খেয়ে থাকেন, আর না হলে অনাহারে দিন কাটাতে হয়। খোদেজার নিজের কিছুই নেই—নেই সম্পদ, নেই সহায়তা। তাঁর ভাতা ছিল একমাত্র আয়ের উৎস, কিন্তু বর্তমানে সেটাও বন্ধ হয়ে গেছে। খোদেজা বলেন, “কত সরকার আইল আর গেল, আমারে কেউ দেখল না। ভাগ্যে জুটলে দুইডা খাই, না জুটলে না খাইয়া থাকি। বাঁচুম আর কয়দিন।”
খোদেজার এ কথায় ফুটে ওঠে দীর্ঘদিন ধরে কোনো সরকারি সহযোগিতা না পাওয়ার বেদনা। আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় অনেক গৃহহীন মানুষ ঘর পেলেও খোদেজা পাননি। তাছাড়া, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও তাঁর কষ্টের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেননি।
প্রতিবেশীদের সাহায্য, তবুও পর্যাপ্ত নয়
খোদেজার জীবনে আব্দুল হালিম তালুকদারের মতো কিছু সহানুভূতিশীল মানুষ আছেন, যারা তাঁর পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। আব্দুল হালিম তালুকদার জানান, “খোদেজা মানসিক ভারসাম্যহীন। সে বয়স্ক ভাতা পেলেও এখন তা বন্ধ আছে। যে কয় টাকা ভাতা পায়, তা দিয়ে তাঁর জীবন চলে না। সমাজের বিত্তবান এবং স্থানীয় প্রশাসন যদি সাহায্যের হাত বাড়ায়, তাহলে খোদেজার এই কষ্ট অনেকটাই দূর হবে।”
তবে এমন সহায়তা যথেষ্ট নয়। খোদেজার আরও সাহায্যের প্রয়োজন, বিশেষ করে স্থায়ী বাসস্থানের জন্য। একজন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বৃদ্ধা হিসেবে তাঁর প্রতিদিনের জীবনসংগ্রাম আরও কঠিন।
স্থানীয় প্রশাসনের উদাসীনতা ও ভবিষ্যতের প্রত্যাশা
খোদেজার জীবনের দুর্দশা থেকে স্পষ্ট যে, স্থানীয় প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিদের সাহায্য তাঁর কাছে পৌঁছেনি। আশ্রয়ণ প্রকল্প কিংবা বয়স্ক ভাতার মতো সরকারি সহায়তাগুলো তাঁর জীবনে কোনো প্রভাব ফেলেনি। অথচ সমাজের বিত্তবানরা এবং স্থানীয় প্রশাসন যদি তাঁর প্রতি দায়িত্বশীল হতো, তাহলে তাঁর জীবন কিছুটা হলেও সহজ হতে পারত।
স্থানীয় আব্দুল হালিম তালুকদারের মতো সমাজের সহানুভূতিশীল মানুষেরা মনে করেন, ৯০ বছর বয়সী এই বৃদ্ধার জীবনযুদ্ধের কষ্ট লাঘবের জন্য সমাজের বিত্তবান ও স্থানীয় প্রশাসনের এগিয়ে আসা উচিত। খোদেজার মতো অসহায় মানুষদের জন্য সরকারি সাহায্য যেমন বয়স্ক ভাতা, তেমনই প্রয়োজন সামাজিক ও মানবিক সহায়তা।