প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই অনেকের দিনের শুরু হয় এক কাপ চা দিয়ে। চা যেন জীবনের প্রথম প্রেমের মতো, যার কথা সকালে প্রথমেই মনে পড়ে। এ ছাড়া চায়ের এক চুমুক না দিলে যেন দিনের সঠিক শুরুই হয় না, মেজাজও থাকে না ফুরফুরে। তবে সবাই যে একই নিয়মে সকালে চা পান করেন, তা নয়। কেউ সকালের নাশতার পর চায়ের কাপে চুমুক দেন, কেউ বা ব্যস্ত জীবনের ফাঁকে যেখানেই সময় পান, সেখানেই চায়ের কাপে ডুবে যান। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় তখনই যখন অনেকেই খালি পেটে চা পান করেন। সাম্প্রতিক সময়ে খালি পেটে চা পান নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। অনেকেই দাবি করেন, সকালে খালি পেটে চা পান করলে শরীরের জন্য তা ক্ষতিকর হতে পারে।
উপকারী পানীয় চা: অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের শক্তি
চা সারা বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় পানীয়। শুধু স্বাদের জন্যই নয়, এর পুষ্টিগুণও গুরুত্বপূর্ণ। চায়ে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের প্রদাহ কমাতে সহায়ক। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো, বিশেষত থিয়াফ্ল্যাভিনস, শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করতে সাহায্য করে, যার ফলে হার্টের রোগের ঝুঁকি কমে। স্ট্রোকের সম্ভাবনাও হ্রাস পায়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত চা পান ক্যানসার প্রতিরোধে কার্যকর হতে পারে। এছাড়া চায়ে থাকা ক্যাটেচিনস ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
খালি পেটে চা পান: ঠিক নাকি ভুল?
কলকাতার বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ মীনাক্ষী মজুমদার খালি পেটে চা পানের বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর মতে, সকালে উঠে খালি পেটে চা পান করা একেবারে নিষিদ্ধ নয়, তবে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। চা পান করার আগে এক গ্লাস পানি পান করে নেওয়া ভালো, এতে গ্যাস বা অ্যাসিডিটির সমস্যা এড়ানো যায়। এছাড়া, চায়ের সাথে একটি বিস্কুট খেয়ে নেওয়াও ভালো, যাতে পেট ফাঁকা না থাকে এবং শরীরে ক্ষতিকারক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি না হয়।
লিকার চা না দুধ চা: কোনটি বেশি উপকারী?
চায়ের বিভিন্ন ধরন রয়েছে— লিকার চা (ব্ল্যাক টি) এবং দুধ চা এর মধ্যে অন্যতম। পুষ্টিবিদদের মতে, দুধ চায়ের চেয়ে লিকার চা অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর। কারণ চায়ের সাথে দুধ মেশালে চায়ের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণাগুণ কিছুটা হ্রাস পায়। তাই পুষ্টিবিদরা লিকার চা পান করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে যাঁরা দুধ চা ছাড়া পারেন না, তাঁদের জন্য পরামর্শ হচ্ছে—দুধের পরিবর্তে ডাবল টোনড দুধ ব্যবহার করতে পারেন। এতে শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি যোগ হবে না এবং ওজন বাড়ার ঝুঁকিও কমবে।
চা ও চিনি: চিনি ছাড়া চা কেন ভালো?
অনেকেই চায়ের সাথে চিনি যোগ করেন, যা চায়ের ক্যালোরি মানকে অনেক বাড়িয়ে দেয়। চিনিযুক্ত চা পান করলে ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা বাড়ে এবং শরীরে প্রদাহ বাড়ে, যা ফ্যাটি লিভার, উচ্চ কোলেস্টেরল এবং অন্যান্য জটিল রোগের কারণ হতে পারে। তাই যতটা সম্ভব চিনি ছাড়া চা পান করার অভ্যাস গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে যদি মিষ্টি ছাড়া চলতেই না পারে, তাহলে সুগার ফ্রি ব্যবহার করতে পারেন।
দিনে কত কাপ চা স্বাস্থ্যকর?
অনেকেই দিনে বেশ কয়েকবার চা পান করে থাকেন। তবে দিনে ২ থেকে ৩ কাপ চা পান করাই নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর বলে মনে করেন পুষ্টিবিদরা। এর বেশি চা পান করলে শরীরে অতিরিক্ত ট্যানিন প্রবেশ করে, যা রাতে ঘুমের ব্যাঘাত, উৎকণ্ঠা এবং পেটের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাছাড়া চা খাবারের আয়রন শোষণ প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করে। তাই সুস্থ থাকতে দিনে ২ থেকে ৩ কাপ চা পান করাই যথেষ্ট।
চা পানের উপকারিতা এবং সতর্কতা
চা একটি উপকারী পানীয়, কিন্তু এর সঠিক পরিমাণ এবং উপযুক্ত সময়ে পান করা খুবই জরুরি। খালি পেটে চা পান করলে অস্বস্তি হতে পারে, তবে পানি বা সামান্য খাবার খেয়ে নিলে তা অনেকটাই এড়ানো সম্ভব। চিনিযুক্ত চা না পান করাই ভালো, কারণ তা ওজন বৃদ্ধির পাশাপাশি অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়।
খালি পেটে চা পানের বিষয়ে নিশ্চিত মতামত না থাকলেও, পুষ্টিবিদদের মতে কিছু নিয়ম মেনে চললে তা ক্ষতিকর নয়। তবে সঠিক পরিমাণে, সঠিক সময়ে চা পান করার অভ্যাস গড়ে তোলাই স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে ভালো।