যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত ক্লিনটন ইনিশিয়েটিভের (সিজিআই) একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ অনুষ্ঠানে তার সফরসঙ্গী হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহফুজ আলম এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আয়েশা সিদ্দিকা তিথি উপস্থিত ছিলেন। তবে, একই মঞ্চে আরেকজন তরুণের উপস্থিতি নিয়ে শুরু হয়েছে তীব্র আলোচনা ও সমালোচনা।
‘ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ’ অনুষ্ঠানে ড. ইউনূস তার বক্তব্যের সময়ে তার সঙ্গে আসা ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের মঞ্চে ডেকে নেন। এই সময় মাহফুজ আলম এবং আয়েশা সিদ্দিকা তিথি মঞ্চে ওঠেন এবং তাদের সঙ্গে আরও এক তরুণ উপস্থিত হন। এই তরুণের নাম সফরসঙ্গীর তালিকায় না থাকায় এবং তার পরিচয় নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন ওঠে। তৃতীয় তরুণকে নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুঞ্জন শুরু হয়, এবং অনেকেই তাকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে দাবি করেন।
ছবিতে দেখা গেছে, তৃতীয় তরুণ সদ্য পতন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের সঙ্গে একত্রে উপস্থিত ছিলেন। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, সোশ্যাল মিডিয়ায় তাকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে উল্লেখ করা হয়। এই নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে, এবং তার মঞ্চে ওঠার উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে।
ড. ইউনূসের সফরসঙ্গী মাহফুজ আলম এক ফেসবুক পোস্টে জানান, তৃতীয় তরুণের নাম জাহিন রোহান রাজিন এবং তিনি হাইড্রোকো প্লাস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ছাত্র আন্দোলনের কোনো সমন্বয়কারী নন এবং তার মঞ্চে ওঠা নিয়ে অনেকেই উদ্বিগ্ন। মাহফুজ আলম তাকে ‘অনুপ্রবেশকারী’ বা ‘ইনট্রুডার’ বলে উল্লেখ করেন এবং জানান, এই ব্যক্তি নিজ ব্যবস্থাপনায় ওই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
মাহফুজ আলম তার পোস্টে বলেন, “আমি এবং আয়েশা সিদ্দিকা তিথি আমাদের মঞ্চে ডাকলে, জাহিন রোহান রাজিন আমাদের আগেই মঞ্চে ছুটে যান। আমরা তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবগত ছিলাম না এবং আমাদের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ ছিল না। তার আচরণ সন্দেহজনক হলেও আমি তাকে মঞ্চে যাওয়া আটকাতে পারিনি। বিশ্বনেতা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জন্য আমি অসহায় বোধ করছিলাম। মনে হচ্ছে, এটি ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর পূর্বপরিকল্পিত কাজ।”
তিনি আরও বলেন, “আমি আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানের নেতৃবৃন্দ, সমন্বয়কারী ও যোদ্ধাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। ভবিষ্যতে আমরা আরও সতর্ক থাকবো।”
এ ঘটনার পর ড. ইউনূসের প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, “তৃতীয় তরুণ জাহিন রোহান রাজিন, তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সমন্বয়কারী নন। ড. ইউনূসের সঙ্গে তার কোনো পূর্ব পরিচয় নেই এবং তিনি ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নন।”
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে এই ঘটনা নিয়ে নানা মন্তব্য করেছেন। কেউ কেউ এটিকে আওয়ামী লীগের কৌশলী পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেছেন, আবার কেউ কেউ দাবি করেছেন যে এটি ছিল একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কাজ। তৃতীয় তরুণের মঞ্চে ওঠা এবং তার আগমনের পদ্ধতি নিয়ে বিস্তর আলোচনা হচ্ছে।
এই ঘটনার জের ধরে মঞ্চে ওঠার নিয়ম-কানুন এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বড় বড় আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে এমন ঘটনা কীভাবে ঘটল তা নিয়ে আয়োজকদের ওপরও চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
ড. ইউনূসের অনুষ্ঠানে তৃতীয় তরুণের উপস্থিতি নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তা শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি রাজনৈতিক অঙ্গনেও আলোচনার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। আগামী দিনগুলোতে এ বিষয়ে নতুন নতুন তথ্য সামনে আসতে পারে, যা এই বিতর্কের পরিণতি কী হবে তা নির্ধারণ করবে।