কক্সবাজারের চকরিয়ায় যৌথ বাহিনীর অভিযানের সময় সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত হয়েছেন সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট তানজিম সারোয়ার নির্জন। নিহতের বড় বোন সুচি বেগম জানিয়েছেন, ঘটনার দিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে তানজিম ফোন করে বলেন, “আপু, বড় একটা ডাকাত দলের সদস্যদের ধরতে একটা অপারেশনে যাচ্ছি। সামনেই তো আমার জন্মদিন, কী দিবা আপু। সেদিন ছুটিতে আসব।” এরপর ফোনটি কেটে দেন। তানজিমের এমন কথার পরপরই তার মৃত্যুর খবর এসে পৌঁছায়।
মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টায় তানজিমের মরদেহ কক্সবাজার থেকে হেলিকপ্টারে করে তার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের করটিয়া ইউনিয়নের করের বেতকা গ্রামে আনা হয়। পুরো এলাকা ঘিরে রাখে সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। মরদেহ পৌঁছানোর পর পরিবারের শোকের মাতমে চারপাশ ভারি হয়ে ওঠে। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে তানজিমের মা নাজমা আক্তার বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। তিনি বিলাপ করে বলেন, “ও আমার আত্মা ছিল। ও যখন অপারেশনে যেত, বলতাম, তুমি দেশের জন্য কাজ করো।” এ সময় তিনি ছেলে হত্যার বিচার দাবি করেন।
তানজিমের বাবা সারোয়ার জাহান বলেন, “এ রকম মৃত্যু যেন আর কোনো বাবাকে দেখতে না হয়। আমি আমার ছেলের হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার চাই। তানজিম ছিল আমাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী।”
গ্রামের বোয়ালী মাদ্রাসা মাঠে জানাজা শেষে তানজিমকে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়। এর আগে তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। জানাজায় সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ বিপুলসংখ্যক মানুষ অংশ নেন।
তানজিমের বড় বোন সুচি বেগম জানান, “আমার মেয়ে সারাকে ভাই শান্তি মিশন থেকে এসে একটা আইফোন কিনে দেবে বলেছিল। কিন্তু ভাগনিকে আর ফোন কিনে দেওয়া হলো না।” কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
তানজিমের ভগ্নিপতি এনামুল হক বলেন, “নির্জন সেনাবাহিনীতে বড় চাকরি করলেও স্বভাবে ছোটদের মতোই ছিল। বাচ্চাদের মতো মোবাইলে গেমস খেলত। বাসায় এলে আমার ছোট মেয়ের সঙ্গে দিনরাত গেমস খেলত।” তিনি আরও জানান, “আগামী ডিসেম্বরে তানজিমের শান্তি মিশনে যাওয়ার কথা ছিল। মিশন শেষে বিয়ের পরিকল্পনা ছিল তার। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। আমরা তার খুনিদের ফাঁসি চাই।”