আগামী ৯ অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাওয়া দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম। তিনি বলেন, পূজামণ্ডপগুলোতে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে এবং তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কার্যকর করা হয়েছে। আইজিপি আশা প্রকাশ করেন, সার্বিক নিরাপত্তা ও সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হবে।
সোমবার (তারিখ উল্লেখ নেই) পুলিশ সদর দপ্তরের হল অব প্রাইডে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে আয়োজিত আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত এক বিশেষ সভায় সভাপতির বক্তব্যে আইজিপি এই কথা বলেন। সভায় র্যাবের মহাপরিচালক, স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রধান, হাইওয়ে পুলিশ, নৌ পুলিশ, ডিএমপি কমিশনার, ঢাকার বিভিন্ন পুলিশ ইউনিটের প্রধানগণ এবং বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আইজিপি ময়নুল ইসলাম জানান, দুর্গাপূজার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তিন স্তরের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এই ব্যবস্থা প্রাক-পূজা, পূজা চলাকালীন, এবং প্রতিমা বিসর্জন-পরবর্তী সময়ে প্রযোজ্য হবে। তিনি বলেন, দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা যেন না হয়, সে জন্য পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়ানো রোধে পুলিশের সাইবার মনিটরিং ইউনিট জোরদার করা হয়েছে। এর মাধ্যমে কোনো ধরনের মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হলে সঙ্গে সঙ্গে তা মোকাবিলা করা হবে।
আইজিপি পূজামণ্ডপগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে আরও জানান, প্রতিটি পূজামণ্ডপে সিসিটিভি/আইপি ক্যামেরা স্থাপন এবং তা চালু রাখার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। পুলিশি নিরাপত্তার পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবকদের দিয়ে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পোশাকে ও সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করবে, যাতে পূজার আনন্দময় পরিবেশে কোনো ধরনের বিঘ্ন না ঘটে। তিনি বলেন, “অপরাধীরা সাধারণত মধ্যরাতে বা শেষ রাতে পূজামণ্ডপে কোনো ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করে, তাই এই সময়ে বিশেষ নজরদারি প্রয়োজন।”
আইজিপি আরও বলেন, পূজা উপলক্ষে সোয়াট, ক্রাইসিস রেসপন্স টিম, কুইক রেসপন্স টিম, ক্রাইম সিন ভ্যান এবং বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে। পূজা চলাকালীন যেকোনো ধরনের বিপদ বা জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য এসব বিশেষ বাহিনী সবসময় প্রস্তুত থাকবে।
এছাড়া, দুর্গাপূজা উপলক্ষে পুলিশের সদর দপ্তর এবং অন্যান্য পুলিশ ইউনিটে বিশেষ মনিটরিং সেল চালু থাকবে। এই সেল থেকে প্রতিনিয়ত পূজামণ্ডপগুলোর নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে এবং জরুরি প্রয়োজনে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, যেকোনো ধরনের অপরাধ বা সন্দেহজনক কার্যক্রম নজরে আসলে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করতে অনুরোধ করা হয়েছে।
আইজিপি ময়নুল ইসলাম আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশে দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, “সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আসন্ন দুর্গাপূজা উৎসবমুখর ও আনন্দঘন পরিবেশে নিরাপদে উদযাপিত হবে। বাংলাদেশ সবসময়ই বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতির একটি উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে, এবং এবারের পূজা অনুষ্ঠানও তেমনই হবে।”
পুলিশের এই ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি পূজা উদযাপন কমিটিকেও সচেতন থাকতে বলা হয়েছে। তারা যেন প্রতিটি মণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবক রাখেন এবং নিয়মিত সিসিটিভি ক্যামেরাগুলোর কার্যকারিতা পরীক্ষা করেন, সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সভায় উপস্থিত বিভিন্ন ধর্মীয় ও পূজা উদযাপন কমিটির নেতারা আইজিপির এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন এবং নিজেদের পক্ষ থেকে পূজার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন। তারা মনে করেন, পুলিশের এই তৎপরতা দুর্গাপূজার নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং পূজার আনন্দঘন পরিবেশ বজায় রাখতে সহায়ক হবে।
আইজিপি ময়নুল ইসলাম আরও বলেন, পূজামণ্ডপে যেকোনো ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবিলায় পুলিশের বিশেষ বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বদা সজাগ রয়েছে এবং কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার আগেই তা মোকাবিলা করা হবে।
আগামী দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশ মহাপরিদর্শক ময়নুল ইসলামের নেতৃত্বে নেওয়া এ তৎপরতার ফলে সবার সহযোগিতায় এবারের পূজা উৎসবমুখর, নিরাপদ এবং শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপিত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।