সম্প্রতি ভারতীয় অভিনেত্রী পূজারিণী ঘোষ তার কঠোর ডায়েট পরিকল্পনার কারণে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এই ডায়েটের ফলে তিনি তিনবার জ্ঞান হারিয়েছেন, এবং অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এমনকি চিকিৎসকরা তাকে আইসিইউতে পর্যবেক্ষণে রাখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি ঘটেছে, তবে তিনি এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেননি বলে জানা গেছে।
ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, পূজারিণী একটি কঠোর ডায়েট মেনে চলছিলেন, যা তার শরীরে মারাত্মক স্ট্রেস সৃষ্টি করে। এই অতিরিক্ত স্ট্রেসের কারণে তার রক্তচাপ হঠাৎ কমে যায়, এবং এর ফলে তিনি বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তিনবার এই ধরনের শারীরিক অবস্থার সম্মুখীন হওয়ার পর তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তার অবস্থা দেখে তাকে আইসিইউতে ভর্তি করেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বর্তমানে পূজারিণী আগের থেকে ভালো আছেন, কিন্তু সম্পূর্ণ সুস্থ হতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে।
বিনোদন জগতে বিশেষ করে মডেল এবং অভিনেত্রীদের মধ্যে কঠোর ডায়েট মেনে চলার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। শারীরিক সৌন্দর্য এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রায়ই সেলিব্রিটিরা ডায়েটিংয়ের ওপর নির্ভরশীল হন। তবে এর কারণে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে, যা পূজারিণীর ঘটনায় স্পষ্ট হয়েছে।
পূজারিণীর অসুস্থতা থেকে বোঝা যায় যে, অত্যন্ত কড়া ডায়েট কখনো কখনো শরীরের স্বাভাবিক কার্যকলাপকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে ডায়েট মেনে চলার কারণে শরীরে পুষ্টির ঘাটতি হতে পারে, যা পরবর্তীতে গুরুতর শারীরিক জটিলতার সৃষ্টি করে। পূজারিণী নিজেও এই চাপের মধ্যে ছিলেন এবং এটি তার স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলেছে।
পূজারিণী ঘোষ প্রথমে মডেলিং জগতে নিজের ক্যারিয়ার শুরু করেন এবং সেখানে বেশ সফলতা অর্জন করেন। এরপর অভিনয়ে যোগদান করেন এবং বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রজেক্টে কাজ করেন। তার অভিনীত সিনেমা ‘কৈফিয়ৎ’ গত বছর মুক্তি পায়, যা প্রশংসিত হয়। এছাড়াও তিনি ‘ওঝা’ নামের একটি জনপ্রিয় ওয়েব সিরিজে কাজ করেছেন। পূজারিণী তার ক্যারিয়ারে আরও কিছু সিনেমায় অভিনয় করেছেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুটি চলচ্চিত্র হলো ‘রূপকথা’ এবং ‘আশমানি ভোর’।
টালিপাড়ায় পূজারিণীর কর্মজীবন বেশ কয়েক বছর ধরে চলছে, এবং তিনি ধীরে ধীরে নিজেকে একজন প্রতিষ্ঠিত অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তার হিন্দি ওয়েব সিরিজ ‘জেএল ফিফটি’-তেও অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি বলিউডে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন।
পূজারিণী ঘোষের কাজের প্রতি একাগ্রতা ও মনোযোগ বিশেষভাবে প্রশংসনীয়। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, তিনি শুধুমাত্র খবরে থাকার জন্য কাজ করতে আগ্রহী নন। তিনি মানসম্পন্ন এবং চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে অভিনয় করতে বেশি আগ্রহী। পূজারিণীর মতে, “কাজের প্রতি গভীর ক্ষুধা রয়েছে, কিন্তু এমন কোনো কাজ করবো না যা আমাকে তৃপ্তি দেবে না।” এই বক্তব্যে তার পেশাদারিত্বের প্রতি দায়বদ্ধতার প্রতিফলন ঘটে।
বিনোদন জগতে সেলিব্রিটিদের মধ্যে শারীরিক সৌন্দর্য বজায় রাখার চাপ বেশ প্রকট। পূজারিণী ঘোষের মতো অনেক সেলিব্রিটিই বিভিন্ন সময়ে কড়া ডায়েট পরিকল্পনা গ্রহণ করেন, যা শরীরকে ফিট রাখতে সাহায্য করে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের কঠোর ডায়েট প্রায়ই শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। পূজারিণীর অসুস্থতার ঘটনাটি এই বিষয়টির প্রমাণ।
কঠোর ডায়েটের প্রভাবে শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টির ঘাটতি দেখা দিতে পারে, যা শরীরের কার্যক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। স্ট্রেস, উচ্চ-মানের কাজের চাপ, এবং কঠোর ডায়েটের সমন্বয় প্রায়ই শরীরের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। তাই চিকিৎসকরা সবসময় পরামর্শ দেন যে, ডায়েটিং এবং শরীরচর্চার আগে পুষ্টিবিদ বা চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
পূজারিণী ঘোষের ঘটনাটি শুধুমাত্র সেলিব্রিটিদের জন্য নয়, সকলের জন্য একটি সতর্কবার্তা। ডায়েটিং এবং শরীরচর্চা করা স্বাভাবিক হলেও, এটি স্বাস্থ্যকর এবং সঠিক পদ্ধতিতে করা উচিত। পুষ্টির ঘাটতি, অতিরিক্ত স্ট্রেস, এবং শারীরিক চাপ শরীরের ওপর যে ধকল তৈরি করে তা প্রায়ই দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকারক প্রমাণিত হতে পারে।
এই ঘটনার মাধ্যমে বুঝতে হবে যে, সুস্থ শরীর ও মন জীবনযাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সৌন্দর্যের মাপকাঠি পরিবর্তনশীল, তবে স্বাস্থ্য অবহেলা করার বিষয় নয়।
বর্তমানে পূজারিণী ঘোষের শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে অনেকটাই ভালো। তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন এবং শিগগিরই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। চিকিৎসকরা তাকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এবং তাকে তার ডায়েট পরিকল্পনায় আরও যত্নবান হতে বলেছেন। পূজারিণীর দ্রুত আরোগ্য কামনা করে তার ভক্তরা সামাজিক মাধ্যমে শুভকামনা জানিয়েছেন।
অভিনেত্রী পূজারিণী ঘোষের কড়া ডায়েটের কারণে হওয়া শারীরিক জটিলতা আমাদের সকলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। সুস্থ জীবনযাত্রার জন্য শুধু শারীরিক সৌন্দর্যের দিকে নজর দেওয়া উচিত নয়, বরং মানসিক শান্তি এবং শরীরের পুষ্টির সঠিক যত্ন নেওয়াও প্রয়োজন। পূজারিণীর দ্রুত সুস্থতা কামনা করে, এই ঘটনা সকলের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করবে, যেন আমরা নিজেদের স্বাস্থ্য নিয়ে আরও বেশি সচেতন থাকি।