আলোচিত পাপমুক্ত সিনেমার নায়ক ও পরিচালক রাসেল মিয়া যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন। রবিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাতে সবুজবাগ থানার পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায়। পুলিশের পক্ষ থেকে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইয়াছিন আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
স্ত্রী সুমাইয়া আফরিন বর্ষার করা মামলায় অভিযোগে বলা হয়, বিয়ের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে যৌতুকের দাবিতে রাসেল মিয়া শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতেন। বর্ষা দাবি করেন, বিয়ের পর থেকে তিনি রাসেল মিয়াকে ৫ লাখ টাকা প্রদান করলেও তার লোভ আরও বাড়তে থাকে। নতুন সিনেমা তৈরির জন্য ৬৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে রাসেল, যা বর্ষা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাকে নির্যাতন করা হয়। এমনকি যৌতুক না পেলে দ্বিতীয় বিয়ের হুমকিও দেওয়া হয়।
মামলার এজাহারে সুমাইয়া আফরিন উল্লেখ করেন, চলতি বছরের ১৬ মার্চ তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পরেই শুরু হয় যৌতুকের জন্য চাপ। বর্ষা জানান, তিনি তার ভবিষ্যৎ সুখের আশায় রাসেলের সাথে ঘরসংসার করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু প্রতি মুহূর্তেই রাসেলের লোভ ও যৌতুকের দাবির চাপ বাড়তে থাকে। ৬৫ লাখ টাকা না দিতে পারার কারণে গত বৃহস্পতিবার রাতে রাসেল বর্ষাকে এলোপাথাড়ি মারধর করেন, যা আশেপাশের লোকজনের হস্তক্ষেপে থামে। বর্ষাকে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
মামলার পরের রাতেই বর্ষা তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেইজে লাইভে আসেন। সেখানে তিনি তার ওপর রাসেল মিয়ার নির্যাতনের বিবরণ দেন। লাইভে কান্নায় ভেঙে পড়া বর্ষা জানান, বিয়ের তিন দিনের মাথা থেকেই যৌতুকের জন্য রাসেল তাকে নির্যাতন করতে শুরু করেন। বর্ষা আরও বলেন, লাইভে আসার পর অনেকেই তার কাছে রাসেলের অতীত জীবনের সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছেন।
লাইভে বর্ষা দাবি করেন, রাসেল মিয়া তার আগের বিয়ে এবং ১১ বছরের সন্তান থাকার বিষয়টি গোপন করে তাকে বিয়ে করেন। এছাড়া নাটকের এক অভিনেত্রীর সঙ্গে তার অনৈতিক সম্পর্ক থাকার কথাও প্রকাশ করেন বর্ষা। তিনি বলেন, রাসেল সেই অভিনেত্রীর সঙ্গে দীর্ঘ আট বছর লিভ টুগেদারে ছিলেন, যা তিনি বিয়ের পরে জানতে পারেন।
২০২২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত রাসেল মিয়ার ‘ভাইয়ারে’ সিনেমাটি বেশ আলোচনায় আসে। এই সিনেমায় রাসেল মিয়া নায়ক ও পরিচালক হিসেবে দ্বৈত ভূমিকা পালন করেন। মুক্তির পর তিনি নিজের সিনেমাকে ‘পাপমুক্ত’ বলে দাবি করেন এবং বলেন, এই সিনেমা দেখলে অজু ভাঙবে না। তার এই মন্তব্যে ব্যাপক সমালোচনা হয়। পরে ২০২৩ সালের চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে বর্ষার সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ১৭ দিনের পরিচয়ের মধ্যেই তারা বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন।
যৌতুকের দাবিতে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ এনে বর্ষা এখন আইনের আশ্রয় নিয়েছেন। রাসেল মিয়াকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। মামলার পরবর্তী শুনানি এবং আইনগত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। বর্ষা নিজেও বলছেন, তিনি তার ভবিষ্যৎ সুখের আশায় সব নির্যাতন সহ্য করে এসেছেন, কিন্তু এখন আর সম্ভব নয়। রাসেলের বিরুদ্ধে এ মামলার প্রভাব তার ব্যক্তিগত ও পেশাদার জীবনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
এই ঘটনার মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে যৌতুক ও নারীর ওপর নির্যাতনের বিষয়টি নতুনভাবে আলোচনায় এসেছে। রাসেল মিয়ার মতো পরিচিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ সমাজের একটি অন্ধকার দিক উন্মোচন করেছে। এখন দেখার বিষয়, আদালতের রায় কী হয় এবং এই ঘটনার পরবর্তী প্রভাব কী হতে পারে।