নিউইয়র্কের জাতিসংঘ সদর দপ্তরে প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসে সংস্থাটির সদস্য সব দেশের নেতারা বৈঠকে বসেন এবং বিভিন্ন বৈশ্বিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন। এবারের ৭৯তম অধিবেশনে বাংলাদেশ একটি নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতার মধ্য দিয়ে অংশগ্রহণ করছে, যেখানে গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটেছে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় এসেছে। দেশের নতুন সরকার এবং এর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ এই অধিবেশনে অংশ নিচ্ছে, যা দেশের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ
গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার সমন্বয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। এই সরকার বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। বিশেষ করে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের প্রশ্নে পশ্চিমা দেশগুলোর সমালোচনার মুখে থাকা বাংলাদেশ এই অধিবেশনকে তাদের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের একটি সুযোগ হিসেবে দেখছে।
জাতিসংঘের মঞ্চে নতুন সুযোগ
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবারের অধিবেশনকে বাংলাদেশের জন্য “বিশ্বসভায় নতুন পদচারণা” এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের নতুন রূপ তুলে ধরার “বিশাল সুযোগ” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্ণ হওয়ায় এ সম্মেলনটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল, যার নেতৃত্বে আছেন ড. ইউনূস, জাতিসংঘের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বিনিয়োগের গুরুত্ব
বাংলাদেশের অর্থনীতির সংকটময় অবস্থা এবং বৈদেশিক সাহায্য ও বিনিয়োগ আনার প্রয়াসও এবারের সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ। সাবেক রাষ্ট্রদূত মাহমুদ হাসান মনে করেন, বৈদেশিক সাহায্য এবং বিনিয়োগ আনতে বাংলাদেশি প্রতিনিধিদল সাইডলাইনে বিভিন্ন আলোচনা করবে। বিশেষ করে উন্নয়ন, ঋণ এবং আর্থিক সহায়তার মতো বিষয়গুলো সম্মেলনের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে।
ভারতের সাথে সম্পর্ক ও অন্যান্য চ্যালেঞ্জ
ভারতের সাথে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কেও টানাপোড়েন রয়েছে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানান, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের সাথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ ও ভারতের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা এবং দুই দেশের স্বার্থের বিষয় বিবেচনায় একটি সম্মানজনক ও কার্যকর সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সাবেক রাষ্ট্রদূত নাসিম ফেরদৌস মনে করেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরা এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পাওয়ার লক্ষ্যেই এ অধিবেশন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।