বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বা অন্যান্য উদ্দেশ্যে দায়েরকৃত হয়রানিমূলক মামলাগুলোর সমাধানকল্পে অন্তর্বর্তী সরকার দুটি কমিটি গঠন করেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন স্বাক্ষরিত পরিপত্র অনুযায়ী, এই কমিটিগুলো জেলা ও মন্ত্রণালয় পর্যায়ে কাজ করবে।
জেলা পর্যায়ের কমিটির কার্যক্রম
জেলা পর্যায়ের কমিটিতে সভাপতির দায়িত্বে থাকবেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, সদস্য হিসেবে থাকবেন পুলিশ সুপার এবং পাবলিক প্রসিকিউটর। মহানগর এলাকাগুলোর ক্ষেত্রে পুলিশের একজন ডেপুটি কমিশনার এবং মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর এই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন কমিটির সদস্য-সচিব।
কমিটির প্রধান কার্যাবলি হলো রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলাগুলোর বিষয়ে তদন্ত করা এবং প্রয়োজনীয় সুপারিশ তৈরি করা। কমিটির নির্দেশনা অনুসারে, আগামী ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪-এর মধ্যে সংশ্লিষ্ট জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট আবেদন দাখিল করতে হবে। আবেদনপত্রের সঙ্গে এজাহার এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে চার্জশিটের সার্টিফাইড কপিও জমা দিতে হবে।
জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পাবলিক প্রসিকিউটরের মতামত সংগ্রহ করে কমিটির সভায় আবেদনটি উপস্থাপন করবেন। কমিটি যদি প্রমাণ পায় যে, মামলাটি হয়রানিমূলক, তবে মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ পাঠানো হবে। এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর নির্দিষ্ট ছকের মধ্যে মামলার বিবরণসহ সুপারিশ ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করতে হবে।
মন্ত্রণালয় পর্যায়ের কমিটির কার্যক্রম
মন্ত্রণালয় পর্যায়ের কমিটিতে সভাপতির দায়িত্বে থাকবেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা। কমিটির অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে থাকবেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব, অতিরিক্ত সচিব (আইন ও শৃঙ্খলা), যুগ্মসচিব (আইন) এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি। মন্ত্রণালয় পর্যায়ের কমিটির সদস্য-সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব বা সিনিয়র সহকারী সচিব।
মন্ত্রণালয় পর্যায়ের কমিটি জেলা কমিটি থেকে প্রাপ্ত সুপারিশগুলো পরীক্ষা করবে এবং প্রত্যাহারযোগ্য মামলা চিহ্নিত করে তালিকা প্রস্তুত করবে। দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের আওতায় দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে ১০ (৪) ধারা অনুযায়ী কমিশনের লিখিত অনুমোদন আবশ্যক। এ ধরণের মামলাগুলো আলাদা করে চিহ্নিত করা হবে এবং করণীয় নির্ধারণ করা হবে।
রাজনৈতিক হয়রানির শিকারদের জন্য আশার আলো
এই দুটি কমিটির গঠন রাজনৈতিক হয়রানির শিকার ব্যক্তিদের জন্য একটি বড় পদক্ষেপ। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও হয়রানির শিকার হয়ে দায়েরকৃত মামলাগুলোর প্রত্যাহার প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হলে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা করা যাচ্ছে।