সরকার পরিবর্তনের পর দক্ষিণের গুরুত্বপূর্ণ বাস টার্মিনালগুলো দখল করে নিয়েছেন সুযোগসন্ধানী নেতারা। এসব টার্মিনাল, যেগুলোকে ‘টাকা বানানোর মেশিন’ বলা হয়, সেগুলোর দখল নিতে আগ্রহী ছিলেন অনেকেই। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই টার্মিনালগুলো দখল হয়ে যায়, এবং এখন চলছে সেই দখলের বৈধতা পাওয়ার চেষ্টা। টার্মিনালগুলোর নিয়ন্ত্রণ বদল হলেও চাঁদাবাজি আর লুটপাটের অভিযোগ আগের মতোই রয়ে গেছে। সাধারণ বাস মালিকরা অভিযোগ করেছেন, তারা আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং অর্থ লোপাটের ঘটনা ঘটছে, তবে নতুন দখলদাররা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
বরিশাল: নেতৃত্বের উত্থান-পতনে মালিকানা পরিবর্তন
বরিশালের রূপাতলী বাস টার্মিনালের বর্তমান আহ্বায়ক হলেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদার। ৫ আগস্ট সরকারের পতনের দিনই তিনি টার্মিনাল দখলে নেন এবং ৭ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন। অভিযোগ উঠেছে, তিনি টার্মিনালের সকল আয় নিজের কাছে রাখছেন, ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নামমাত্র অর্থ জমা হচ্ছে এবং আগের মতো চাঁদাবাজিও চলছে। তবে জিয়াউদ্দিন সিকদার এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল: বিএনপি নেতার প্রভাব
বরিশালের নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালের বর্তমান নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তি হচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, সাবেক এমপি মজিবর রহমান সরোয়ারের ছোট ভাই মোশাররফ হোসেন। যদিও তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে দখল নেননি, বাস মালিকদের দাবি অনুযায়ী তার নির্দেশনাতেই টার্মিনালের কার্যক্রম চলছে। মোশাররফ হোসেন পরিবহন ব্যবসায় ফিরে এসেছেন এবং তিনি টার্মিনালের আয়ের নিয়ন্ত্রণ করছেন।
অন্যান্য জেলাগুলো: দখলের ধারা অব্যাহত
বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরগুনা, এবং ঝালকাঠির বাস টার্মিনালগুলোতেও একই ধরনের দখলের ঘটনা ঘটেছে। বরগুনায় বিএনপি নেতা হারুন অর রশিদ ও ফারুক সিকদার নতুন আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়ক হয়েছেন। পটুয়াখালীতে বশির মৃধা ও খন্দকার ইমাম হোসেন বাস মালিক সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক হয়েছেন। ঝালকাঠিতে প্রকৃত বাস মালিকরাই নতুন কমিটি গঠন করেছেন, তবে বিএনপি ঘরানার নেতারা কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন।
ক্ষমতার পালাবদল: একই রয়ে গেছে পরিস্থিতি
বাস মালিকদের মতে, সরকারের পরিবর্তন হলেও টার্মিনালগুলোতে চাঁদাবাজি ও লুটপাটের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে যা চলছিল, এখন বিএনপির নেতারাও একই ধারা বজায় রেখেছেন। অনেক বাস মালিক মনে করছেন, তারা বাধ্য হয়ে বিএনপি নেতাদের প্রভাব মেনে নিয়েছেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছেন না।