ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে এক মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যাক্তিকে পিটিয়ে হ*ত্যার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বুধবার রাতে এই ঘটনা ঘটে। হলের কিছু শিক্ষার্থী তাকে আটক করে গেস্টরুমে নিয়ে যায় এবং সেখানে কয়েক দফা মারধর করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. ফারুক এই মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, রাত বারোটার কিছু পরে শিক্ষার্থীরা লোকটিকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন, তবে তার আগেই তিনি মারা যান।
মৃত ব্যাক্তির পরিচয়
মৃত ব্যাক্তির নাম তোফাজ্জল। তার গ্রামের বাড়ি বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলায়। জানা গেছে, তিনি দীর্ঘদিন ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন এবং তার বাবা-মাও জীবিত নেই।
ঘটনার বিবরণ
প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, ঘটনার সূত্রপাত হয় হলের একটি খেলার আয়োজনের সময়। সেসময় কয়েকটি মোবাইল চুরি হয়, এবং সন্দেহভাজন হিসেবে তোফাজ্জলকে আটক করা হয়। তাকে গেস্টরুমে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং পরে কয়েক দফা মারধর করা হয়। এক পর্যায়ে তিনি আর নড়াচড়া করতে পারছিলেন না, তবুও তাকে নাচতে বাধ্য করা হয়। রাত দশটার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের মোবাইল টিম এবং হাউজ টিউটররা সেখানে উপস্থিত হলেও লোকটিকে আটক রেখে পেটানো অব্যাহত ছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মোবাইল টিমের ভূমিকা
মোবাইল টিমের এক সদস্য জানান, খবর পাওয়ার পর তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং পরিস্থিতি দেখে লোকটিকে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে শিক্ষার্থীরা এই ঘোষণার পরপরই হাসপাতাল থেকে চলে যায়।
হলের গেইটম্যানের বিবৃতি
হলের গেইটম্যান জানান, তিনি ডিউটিতে এসে দেখেন গেস্টরুমের বাইরে হাউজ টিউটররা দাঁড়িয়ে আছেন। কিছু সময় পরে তিনি গেস্টরুমে গিয়ে দেখেন লোকটিকে চড়-থাপ্পড় দেওয়া হচ্ছে। পরে হাউজ টিউটর এবং মোবাইল টিমের সদস্যরা তাকে নিয়ে যান।
হল প্রাধ্যক্ষের অনুপস্থিতি
ঘটনার পর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও হল প্রাধ্যক্ষ ড. শাহ মো. মাসুম ঘটনাস্থলে আসেননি বলে অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষার্থীরা তাকে ফোন দিয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি সাড়া দেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ এবং সহকারী প্রক্টররা ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর সকাল সাতটার দিকে প্রাধ্যক্ষ সেখানে আসেন।
পরবর্তী পদক্ষেপ
পুলিশ জানিয়েছে, মৃত ব্যাক্তির সুরতহাল তৈরি করার পর পরবর্তী কার্যক্রম শাহবাগ থানার অধীনে নেওয়া হবে।