দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপজেলা ভোলায় নতুন করে সাড়ে ছয় লাখ কোটি টাকার উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। গ্যাসের এই পরিমাণ প্রায় ৫.১০৯ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ), যা দেশের পাঁচ বছরের গ্যাসের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম। ভোলার শাহবাজপুর, ইলিশা এবং চরফ্যাশন এলাকায় এই গ্যাসের সন্ধান মিলেছে। গবেষণা অনুযায়ী, দেশের গ্যাস চাহিদা মেটাতে এই সম্পদ বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে।
ভোলার শাহবাজপুর ও ইলিশা এলাকায় ২.৪২৩ টিসিএফ এবং চরফ্যাশনে ২.৬৮৬ টিসিএফ গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। পেট্রোবাংলা ও বাপেক্সের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রম এই গ্যাসের মজুদের সন্ধান পেয়েছে। এই গবেষণা কার্যক্রম ২০২০ সালে শুরু হয়ে চলতি বছরের জুনে শেষ হয়েছে। গ্যাজপ্রমের মুখপাত্র এলেক্সি বেলবেজিয়াভ জানান, আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী সিসমিক, অয়েল লক ও কোর ডাটা বিশ্লেষণ করে এই গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়েছে। উন্নত প্রযুক্তি ও সুপার কম্পিউটার ব্যবহার করার ফলে গবেষণার তথ্যগুলো অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্রনাথ সরকার জানিয়েছেন, ভোলার গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভোলা থেকে বরিশাল এবং বরিশাল থেকে খুলনা পর্যন্ত গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণের পরিকল্পনা চলছে। একই সঙ্গে দ্রুত সময়ে এলএনজি ও সিএনজির মাধ্যমে গ্যাস ঢাকায় সরবরাহ করার প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে। এ জন্য উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানিকে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হবে। দেশীয় উৎস থেকে গ্যাসের সরবরাহ বাড়াতে নানান উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভোলার পাঁচটি কূপ থেকে দৈনিক ৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে আরো পাঁচটি কূপ খনন করে দৈনিক ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা যাবে। এছাড়া চরফ্যাশনে ছয়টি ভূতাত্ত্বিক কাঠামো চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে ৩০টি কূপ খননের মাধ্যমে দৈনিক ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন সম্ভব হবে। সব মিলিয়ে, ভোলার গ্যাস কূপগুলো সঠিক সময়ে বাস্তবায়িত হলে দৈনিক ৯২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা যাবে, যা দেশের গ্যাস সংকট নিরসনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
গ্যাজপ্রমের কূপগুলো থেকে দৈনিক ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে, যা দেশের গ্যাস চাহিদা মেটাতে সাহায্য করছে। বর্তমানে দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট, যার মধ্যে ২৬৩৩ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ করা হচ্ছে। ১৩৬৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি রয়েছে।
বিদেশি এলএনজি আমদানি সীমিত করে দেশীয় গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর জন্য পেট্রোবাংলা ও বাপেক্স যৌথভাবে কাজ করছে। পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা বলছেন, ভোলায় গ্যাসের রিজার্ভ বাড়ায় পাইপলাইন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে এই গ্যাস স্থানীয় বিদ্যুৎকেন্দ্র ও কারখানাগুলোতে সীমিত পরিসরে সরবরাহ করা হচ্ছে।
গ্যাসক্ষেত্রের উন্নয়নে বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, “বাপেক্সের সক্ষমতা এখনও পর্যাপ্ত নয়, তাই বিদেশি কোম্পানির সহযোগিতায় গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম চালালে দ্রুত সময়ে দেশীয় গ্যাস উত্তোলন বাড়ানো সম্ভব হবে।”
পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, ভোলায় গ্যাস ক্ষেত্রের উন্নয়ন সঠিক সময়ে হলে দেশের উচ্চমূল্যের এলএনজি আমদানি নির্ভরতা কমে যাবে।
ভোলায় পাওয়া এই নতুন গ্যাসের সন্ধান দেশের জ্বালানি খাতে একটি বড় সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছে। গ্যাস উত্তোলনের সঠিক ও দ্রুত কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের গ্যাস সংকট দূর করার পাশাপাশি, বিদ্যুৎ উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারবে।