২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যুৎ উৎপাদন দ্রুত বাড়ানোর লক্ষ্যে দরপত্র ছাড়াই ৯০টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দেয়। এই প্রকল্পগুলোতে আইনগত সুরক্ষা দিতে ২০১০ সালে প্রণীত হয় ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি আইন’, যা দায়মুক্তি আইন নামে পরিচিত। এই আইনে বলা হয়, “কোনো কার্য, গৃহীত কোনো ব্যবস্থা, প্রদত্ত কোনো আদেশ বা নির্দেশের বৈধতা সম্পর্কে কোনো আদালতের নিকট প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না।”
প্রাথমিকভাবে মাত্র দুই বছরের জন্য প্রণীত এই আইনটির মেয়াদ কয়েকবার বাড়িয়ে ১৫ বছর পর্যন্ত টিকিয়ে রাখা হয়। এ সময়ে বিশেষ সুবিধা নিয়ে কয়েকটি বিদ্যুৎকোম্পানি ৩ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত করমুক্ত সুবিধা ভোগ করে। এছাড়া, অনেক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র মেয়াদ শেষের পরও বছরের পর বছর চালু রাখা হয়েছে, যা সরকারের জন্য বিশাল অঙ্কের ভাড়া খরচ তৈরি করেছে।
বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৭ হাজার মেগাওয়াট হলেও গড়ে উৎপাদন হচ্ছে ১৩ থেকে ১৪ হাজার মেগাওয়াট। তবে, বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে নিয়মিতই টাকা পরিশোধ করেছে সরকার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা, যা এক বছরে বেড়ে ২৮ হাজার কোটিতে পৌঁছায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চার্জ পেয়েছে সামিট গ্রুপ, যার পেছনে সরকার ব্যয় করেছে ১০ হাজার ৬২৩ কোটি টাকা। এগ্রিকো, এরদা পাওয়ার, ইউনাইটেড এবং আরপিসিএলও যথাক্রমে হাজার হাজার কোটি টাকার সুবিধা নিয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বিশাল অঙ্কের অর্থ লুটপাট এবং তছরুপের মাধ্যমে দেশের বাইরে পাচার করা হয়েছে। কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশনের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম মন্তব্য করেন, এই আইন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে লুটপাটের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এই আইনের কারণে জনগণের অর্থ বিনিয়োগকারীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে, যা বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি এবং আত্মসাতের সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
গত ১৬ বছরে কেবল ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ যে অর্থ ব্যয় করা হয়েছে, তা দিয়ে চারটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যেত। বিশ্লেষকরা বিদ্যুৎখাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং দায়মুক্তি আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।