আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ সম্পন্ন করা সানিয়াতকে ডিবি পুলিশ ২৪ জুলাই অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের অভিযোগে আটক করে। তিনি শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের অংশ হিসেবে পুলিশের হেফাজতে ছিলেন দীর্ঘদিন ধরে। অভিযোগ ওঠে, রিমান্ড চলাকালে তার উপর চালানো হয় নির্মম নির্যাতন, যা শেষ পর্যন্ত তার পরিবার ও সহপাঠীদের জন্য দুঃসহ স্মৃতি হয়ে দাঁড়ায়।
সম্পূর্ণ ঘটনাঃ
সানিয়াতের মা অসুস্থ থাকায় তার বাবা হাসপাতালে নিয়ে যায় মাকে। ছোট ভাইকে নিয়ে বাসায় ছিল সানিয়াত। তার ছোট ভাই আবার ডাউন সিন্ড্রোমের রোগী। রাতের বেলা পেস্ট্রি খাওয়ার আবদার করে। ডাউন সিন্ড্রোমের রোগীদের আবদার তৎক্ষনাৎ পূরণ না করলে এরা অস্থির হয়ে যায়। সানিয়াত ছোট ভাইকে শান্ত করতে রাত একটার দিকে বাসা থেকে বের হয় পেস্ট্রি কিনতে। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ‘উডেন স্পুন’ নামক একটি খোলা দোকান পেয়ে ঐখানে ঢুকে।
কেক নিয়ে দোকান থেকে বের হতেই ডিবি’র জ্যাকেট পরা একদল তাদের ঘিরে ধরলো। নামটাম জিজ্ঞেসবাদ শেষে ঘাড় ধরে গাড়িতে তুলে ফেলে। সানিয়াত টেনশন করছিল তার ছোট ভাইকে নিয়ে। তাকে দেখভাল করবে কে! তার বাবার খোঁজে ডিবি তাদের গাড়িতে কারেই হাসপাতালে নিয়ে যায়, যেখানে তার মাকে ভরতি করানো হয়। সেখানে গিয়ে তার বাবাকে পেল না। মায়ের রুমে নার্সরা ঢুকতে দিল না ডিবিকে। পরে সানিয়াতকে নিয়ে চলে যায়৷
তার কাছ থেকে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি নেয়ার চেষ্টা করা হয় তারেক রহমানের সাথে তার যোগাযোগ ছিল। রামপুরা থেকে উত্তরা সব স/হিং/স/তার নেতৃত্ব দিছে সে—এটা জোর করে স্বীকারোক্তি নিতে চাইল।
এদিকে সানিয়াতকে কোথায় নিয়ে গেল তার কোনো খোঁজ পাচ্ছিলো না মা-বাবা। একদিন পর তার মা ঢাকা মেডিকেল মর্গে গিয়ে তার লাশ খোঁজে। কোথাও সানিয়াতকে দেখতে না পেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে পড়েন। জ্ঞান ফেরার পর আদালতে খোঁজ নিতে যান।
সানিয়াতকে ওই দিনেই আদালতে তোলা হয়। পাঁচ দিনের রিমান্ড দেওয়া হয়। আদালত থেকে বের করে প্রিজন ভ্যানে তোলার সময়ই তার মা দেখতে পায় তাকে। তিনি পেছনে থেকে দৌঁড়ে গিয়ে পিঠে চাপড়ে তাকে সাহস দেয়।
তুলে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে তো অনবরত টর্চার চলছেই, নতুন করে তার মায়ের সাথে এই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর আরও ক্ষিপ্ত হয়ে যায় ডিবি। বেড়ে যায় টর্চারের মাত্রা।
তাকে ঝুলিয়ে উল্টো করে দৈনিক ১৫-১৬ ঘন্টা করে টর্চার করেছে। তার শরীরের নিচের অংশ ফুলে রক্ত জমাট বাঁধে যায়। চিৎকার করলে নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিত। বাঁচার একমাত্র উপায় ছিল সেখানেই পড়ে থেকে চুপচাপ মারধর সহ্য করা।
তার নখের ওপর প্লায়ার ব্যবহার করার চেষ্টা করেছিল। সে একটু একটু হাঁটতে পারতো, এটা দেখেই হারুন ক্ষিপ্ত হয়ে যায় কর্মকর্তাদের উপর। মানে কী মারতেছোস তোরা, ও এখনো হাঁটতে পারে কেমনে!!
আদালত চত্বরে মায়ের ভিডিওর কথা বলেই তাচ্ছিল্যে করে মারধর শুরু করতো। পানি খেতে চাইলে, পানি তো দিতো না বরং শাস্তি হিসেবে তাকে দুইজন লোকের সাহায্য হাঁটতে বাধ্য করে।
ভিডিও কথা সানিয়াত কিছু জানতো না। যখন সে জিজ্ঞেস করতো, কিসের ভিডিও? শুরু করতো আবার টর্চার। তখন উপহাস করে বলতো, হারুণ স্যার তোমার জন্য অনেক কিছু পরিকল্পনা করেছে। তুমি এখানে অনেক দিন থাকবে।
কখন রাত কখন দিন, কিছুই বুঝতো না। কালো কাপড়ে চোখ বেঁধে রাখা হতো। যখন ইচ্ছে তখন এসেই মারধর শুরু করতো।
কিছুদিন আগে দেখেছি রাজনৈতিক কোনো কোনো নেতা আগ বাড়িয়ে ক্ষমার কথা বলায় আওয়ামী লেসপেন্সাররা মাথা ছাড়া দিয়ে উঠছে। কেউ কেউ পুনর্বাসন করতে চেষ্টাও করতাছে। ক্ষমা করা ভালো। এটা করতে পারাটা মহৎ হৃদয়ের কাজ। কিন্তু অপরাধ করতে করতে এমন পর্যায় চলে যাওয়ার পর যার জন্য আর ক্ষমা অবশিষ্ট থাকে না, তাকে আপনি কিভাবে ক্ষমা করার কথা বলবেন!
শেখ হাসিনা এবং তার লেসপেন্সাররা গত ১৬ বছর এতো সব অপরাধ করেছে যে, তাদের জন্য আর ক্ষমা অবশিষ্ট থাকে না। এদের প্রতি বিন্দুমাত্র দয়া কারো হৃদয়ে থাকতে পারে না। চোখের সামনে এদের করুণ পরিণতি না দেখতে পারলে আমাদের হৃদয় শান্ত হবে না। আমরা যারা সহপাঠী, আশপাশের মানুষকে মরতে দেখেছি; তাদের হাতে নির্মম নি/র্যা/তন সহ্য করতে দেখেছি।