বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে, বাংলাদেশ থেকে ভারতে ইলিশ মাছ রপ্তানি আপাতত বন্ধ থাকবে। ভারতের সংবাদমাধ্যম নিউজ-১৮-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন, “আমরা দুঃখিত, কিন্তু ভারতে ইলিশ পাঠাতে পারব না। ইলিশ খুবই দামি মাছ এবং এটি ভারতে রপ্তানি করার ফলে দেশের সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। তাই আমাদের জনগণকেই এটি ভোগ করতে দিতে হবে।”
ফরিদা আখতার আরও বলেন, “আমরাও দুর্গাপূজা উদ্যাপন করি এবং আমাদের জনগণই তা উপভোগ করতে পারে। ইলিশের চাহিদা দেশের অভ্যন্তরে ব্যাপক, এবং দেশের জনগণের প্রয়োজন আগে। তাই আপাতত ইলিশের রপ্তানি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
এর মাধ্যমে সরকারের পক্ষ থেকে একটি স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হচ্ছে যে দেশের জনগণের স্বার্থই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। ইলিশের উচ্চমূল্যের কারণে সাধারণ মানুষের পক্ষে এটি ক্রয় করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়, বিশেষ করে যখন এটি রপ্তানি হয়। সরকার এই পরিস্থিতি পরিবর্তন করে দেশের অভ্যন্তরে ইলিশের সহজলভ্যতা বাড়াতে চায়।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে দুর্গাপূজা উপলক্ষে ইলিশ উৎসবের ঐতিহ্য বহুদিনের। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে পদ্মার ইলিশের জন্য পশ্চিমবঙ্গের মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে। তবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিবর্তন ও শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর থেকে এই ইলিশ রপ্তানির ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়েছে।
কলকাতার ব্যবসায়ীরা এবছর ইলিশ রপ্তানি বন্ধের কারণে বিশেষভাবে হতাশ। তারা জানান, দুর্গাপূজার আগে বাংলাদেশ থেকে ইলিশ রপ্তানির জন্য যে চিঠি পাঠানো হয়েছিল, তার কোনো জবাব আসেনি। ফলে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে বাংলাদেশের ইলিশ পৌঁছানোর সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।
ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত দেশের অর্থনীতি ও জনজীবনের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে, দেশের অভ্যন্তরে ইলিশের মূল্যহ্রাস ও জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে, ভারতীয় বাজারের জন্য এটি একটি হতাশার খবর, যেখানে বহু বছর ধরে পদ্মার ইলিশ একটি আকর্ষণীয় পণ্য ছিল।
সরকারের এই নীতি আপাতদৃষ্টিতে দেশের জনগণের জন্য ইতিবাচক মনে হলেও, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও বাণিজ্যিক চুক্তির ক্ষেত্রে এটি একটি জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।