শেখ হাসিনার তৃতীয় মেয়াদে রেলমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন নূরুল ইসলাম সুজন। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি রেলকে দুর্নীতিমুক্ত করার অঙ্গীকার করেছিলেন। তবে, বাস্তবে তার পাঁচ বছরের মেয়াদে রেলপথ মন্ত্রণালয় একের পর এক কেলেঙ্কারির মুখে পড়ে। অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার মিলে নূরুল ইসলাম সুজন নিজেই রেলের ‘কালো বিড়াল’ হিসেবে পরিচিতি পান।
নিজ জেলায় রেলকেন্দ্রিক পরিকল্পনা
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন, নূরুল ইসলাম সুজন রেলের উন্নয়নের ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্ব দেখিয়েছেন। তিনি নিজের জেলা পঞ্চগড়কে রেলের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা করেছিলেন। এছাড়া, করোনাকালে সুরক্ষা সামগ্রী কেনার দুর্নীতিতে অভিযুক্তদের পদোন্নতি দেন এবং তার ঘনিষ্ঠজনদের নানা সুবিধা দিয়েছেন। এমনকি অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগগুলো নিজের ক্ষমতা দিয়ে বৈধ করেছিলেন।
প্রকল্প গ্রহণে রাজনৈতিক প্রভাব ও ঠিকাদারদের ভূমিকা
নূরুল ইসলাম সুজনের সময়ে প্রকল্প গ্রহণে রাজনৈতিক বিবেচনা এবং ঠিকাদারদের পরামর্শের গুরুত্ব বাড়ে। এর একটি উদাহরণ হলো রাজবাড়ী থেকে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ ও সংস্কার প্রকল্প। প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পে দাবি করা হয়েছিল যে, এই রেলপথ দিয়ে প্রতিদিন ১৪টি ট্রেন চলবে। তবে, বর্তমানে এই রুটে মাত্র দুটি ট্রেন চলছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, মন্ত্রীর অদক্ষতা ও পরিকল্পনার অভাবের কারণেই রেলপথে প্রয়োজনীয় যাত্রী সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।
রেলের বিপুল লোকসান
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ রেলওয়ে ৮৯টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে, যেখানে খরচ হয়েছে ২১ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রেলের লোকসান ছিল ১ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা, যা ২০২০-২১ অর্থবছরে কমে ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। ২০২১-২২ অর্থবছরে লোকসান বেড়ে হয় প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রেলের আয় ছিল ১ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা, আর ব্যয় ছিল ৩ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। এই সময়ে লোকসানের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা। নূরুল ইসলাম সুজনের মেয়াদকালে রেল লোকসানের বোঝা বয়ে চলেছে।