ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের এক মাস পূর্ণ হয়েছে। ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন এই সরকারকে ঘিরে মানুষের পাহাড়সম প্রত্যাশা থাকলেও, বিশ্লেষকরা বলছেন, দুর্নীতি, অনিয়ম, এবং দলীয়করণের মাধ্যমে প্রশাসন থেকে বিচার বিভাগ, অর্থনীতি থেকে শিক্ষা—সবক্ষেত্রে যে সংকট রেখে গেছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার, তা সমাধান করা স্বল্প সময়ে কঠিন হবে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা জিল্লুর রহমান বলেন, “আমরা সুশাসনের সম্পূর্ণ ধসে পড়া অবস্থার মুখোমুখি হয়েছিলাম। ক্ষমতার অপব্যবহার চরমে পৌঁছেছিল। তাই সংস্কার শুধু একটি ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। রাজনৈতিক দল, রাষ্ট্রযন্ত্র, এবং যারা ক্ষমতায় থাকবে, তাদের ক্ষমতার যথাযথ ব্যবহারে পরিবর্তন আনতে হবে।”
রাজনৈতিক গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমরা যে ধরনের রাজনীতির সঙ্গে অভ্যস্ত, তাতে তিন মাস, ছয় মাস, বা দশ বছরের সময়সীমা উল্লেখ করা হয়। কিছু মানুষ ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে উঠেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এতে আমাদের কী লাভ? তাই রাষ্ট্রের সার্বিক সংস্কার দরকার।”
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্র সংস্কারের রোডম্যাপ দ্রুত নির্ধারণ করা জরুরি। বিভিন্ন পক্ষ নিজেদের ক্ষমতাবান মনে করে সুযোগ নিতে শুরু করেছে, যা পরিস্থিতিকে অস্থির করে তুলছে। মহিউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, “অনেকগুলো পাওয়ার সেন্টার রয়েছে—আমলাতন্ত্র, রাজনৈতিক দল, ছাত্র সমাজ, সেনাবাহিনী—এসবই একেকটি পাওয়ার সেন্টার। তাই পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল।”
জিল্লুর রহমান মনে করেন, “বিভিন্ন পক্ষ অ্যাক্টিভ রয়েছে এবং তাদের প্রয়োজনগুলো মেটাতে হবে। প্রতিযোগিতামূলক ক্ষমতার কেন্দ্রগুলো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে। তাই সুষ্ঠু সমন্বয় প্রয়োজন।”
অর্থনীতির ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে সরকার একটি শ্বেতপত্র প্রকাশের জন্য কমিটি গঠন করেছে। তবে বাজার নিয়ন্ত্রণ ও অর্থনীতিতে আস্থা ফিরিয়ে আনতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন হোসেন জিল্লুর রহমান। একইসঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি জোরদারের পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।
হোসেন জিল্লুর আরও বলেন, “গণহত্যা, গুম, খুন, দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগের দ্রুত তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে, যেন জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা যায়। তবে ঢালাও মামলা যেন কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ না করে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আরও পরামর্শ দিয়েছেন, আক্রোশ ও বিভাজনের রাজনীতি থেকে দূরে থেকে সকল রাজনৈতিক দলকে আরও সহনশীল হয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করতে।