বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে করা অর্থপাচারের মামলার রায় দিতে গিয়ে জীবন ঝুঁকিতে পড়েন বিচারক মোতাহার হোসেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, ২০১৩ সালে তারেক রহমানকে সাজা দেওয়ার জন্য তাকে ভয় দেখিয়ে চাপ দেওয়া হয়। এমনকি ধানমণ্ডির এক উচ্চপদস্থ বিচারপতির বাসায় তাকে ডেকে নিয়ে পিস্তল ঠেকানো হয়।
মামলায় কোনও প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও চাপ
বিচারক মোতাহার হোসেন বলেন, “মামলায় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ না থাকায় আমি তাকে বেকসুর খালাস দিয়েছিলাম। কিন্তু তার আগে আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। সাবেক আইন সচিব জহিরুল হক দুলাল এবং গোয়েন্দা কর্মকর্তারা আমাকে সাজার রায় দিতে বলেছিলেন। কিন্তু ন্যায়বিচারের স্বার্থে আমি সেই চাপ উপেক্ষা করি।”
রায়ের আগে পিস্তল দিয়ে ভয় দেখানো
বিচারক জানান, তারেক রহমানকে সাজা দেওয়ার জন্য একাধিকবার তাকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। ধানমণ্ডিতে এক বিচারপতির বাসায় তাকে ডেকে নিয়ে উপস্থিত গোয়েন্দা কর্মকর্তারা পিস্তল বের করে ভয় দেখানোর চেষ্টা করেন। তবে বিচারক মোতাহার হোসেন তার নৈতিকতার জায়গায় অটল থেকে ন্যায়বিচার করেন।
ফেরারি জীবনযাপন
রায় ঘোষণার পরপরই বিচারক মোতাহার হোসেন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকেন। তার পিছু নিত গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। ফলে তিনি দেশ ছেড়ে মালয়েশিয়া চলে যান। এরপর বিভিন্ন দেশ ঘুরে ২০২২ সালে ফিনল্যান্ডে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। তবে এখন দেশের পরিস্থিতি পাল্টে যাওয়ায় তিনি দেশে ফেরার পরিকল্পনা করছেন।
পরিবারের কষ্ট ও জীবন সংগ্রাম
নিজের জীবন ঝুঁকির কারণে বিচারক মোতাহার হোসেনকে দীর্ঘদিন ফেরারি জীবনযাপন করতে হলেও তার পরিবারও নিরাপত্তাহীনতায় ছিল। তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকেও বিভিন্ন জেলা থেকে অন্য জেলায় পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে। তবে দেশে ফিরে এসে বিচার বিভাগকে প্রভাবমুক্ত করতে কাজ করার আশা প্রকাশ করেছেন মোতাহার হোসেন।
অতীতের আরেক ঘটনা
এটি ছিল না বিচারক মোতাহারের জীবনে প্রথম এমন ঘটনা। ২০০৯ সালে চুয়াডাঙ্গায় আওয়ামী লীগের নেতাদের শাস্তি দিয়ে তার ওপর হামলা হয়। আদালত চেম্বারে গুলি চালানো হয়, ফলে সেবারও তিনি আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন।
দেশে ফেরার পরিকল্পনা
মোতাহার হোসেন জানান, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর দেশে ফেরার চিন্তা করছেন তিনি। দেশকে স্বৈরশাসন ও ফ্যাসিবাদমুক্ত করার পাশাপাশি বিচার বিভাগকে প্রভাবমুক্ত করতে চান তিনি, যাতে দেশের মানুষ ন্যায়বিচার পেতে পারে।