স্থূলতা শহুরে জীবনে এক বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। ওজন কমাতে আমরা না খেয়ে থাকা, ব্যায়ামাগারে যাওয়া, মেপে খাওয়া, সকাল-বিকেল হাঁটা, এমনকি ট্রেডমিল ব্যবহার করার মতো নানা চেষ্টা করি। কিন্তু এরপরও ওজন নিয়ন্ত্রণ করা যেন অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ওজন কমানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সকালের নাশতা। কী খাচ্ছেন এবং কখন খাচ্ছেন, তার ওপর নির্ভর করে আপনার ওজন কমবে কি না। কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, কখন সকালের নাশতা করলে ওজন কমাতে সবচেয়ে বেশি উপকার পাবেন?
পুষ্টিবিদ ও কিংস কলেজ লন্ডনের জেনেটিক এপিডেমিওলজির অধ্যাপক টিম স্পেক্টর বলেন, সকালের নাশতা করতে হবে বেলা ১১টার পর। কেন তিনি এমনটি বলেন? কারণ, গবেষণা অনুযায়ী, টানা ১৪ ঘণ্টা না খেয়ে থাকা ওজন কমাতে সহায়ক। সে ক্ষেত্রে, রাতের খাবার সেরে ফেলতে হবে রাত ৯টার মধ্যে। যদি রাত ৮টার মধ্যে রাতের খাবার শেষ করা যায়, তবে সকাল ১০টা বা তার কিছু পরে নাশতা করতে পারবেন।
অধ্যাপক স্পেক্টরের মতে, সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে রাতের খাবার খাওয়া সবচেয়ে ভালো। কারণ, সূর্য ডোবার পর শর্করাজাতীয় খাবারের হজমে ব্যবহৃত হরমোনের নিঃসরণের হার কমতে থাকে। রাতের খাবার আগে শেষ করে ফেললে, সকাল ৮টায় নাশতা করা সম্ভব হবে। এছাড়া, তিনি আরও বলেন, ঘুম থেকে উঠেই নাশতা না করে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করা ওজন কমানোর জন্য কার্যকর।
কেন ১৪ ঘণ্টা পর সকালের নাশতা?
মানব শরীরের স্বাভাবিক বিপাকক্রিয়ার জন্য ১৪ ঘণ্টা উপবাস থাকা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আমাদের অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার একটি সার্কাডিয়ান ছন্দ রয়েছে, যা বিশ্রামের প্রয়োজন। এই ছন্দ আমাদের ঘুম, শরীরের তাপমাত্রা, মনের অবস্থা এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে। ১৪ ঘণ্টা না খেয়ে থাকলে ব্যাকটেরিয়াগুলো খাবার হজমে আরও দক্ষ হয়ে ওঠে।
কতটুকু ওজন কমানো সম্ভব?
গবেষণায় দেখা গেছে, ১৪ ঘণ্টা উপোস রেখে নিয়ম মেনে সকালের নাশতা করলে মাসে ১ থেকে ৫ কেজি পর্যন্ত ওজন কমতে পারে। এছাড়াও, এটি শুধুমাত্র ওজন কমাতে সাহায্য করে না, বরং সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্যও উন্নত করে।
৫:২ ডায়েটের চেয়ে ভালো
১৪ ঘণ্টা উপোস রেখে নাশতা করা বর্তমানে জনপ্রিয় ‘৫:২ ডায়েট’ থেকে বেশি কার্যকর। ৫:২ ডায়েটের নিয়ম অনুযায়ী, সপ্তাহে পাঁচ দিন স্বাভাবিক খাবার খেতে হয় এবং দুই দিন উপোস থাকতে হয়। তবে এই পদ্ধতিতে উপোস শেষে অতিরিক্ত খাওয়ার ঝুঁকি থাকে, যা ওজন কমানোর পরিবর্তে বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই ১৪ ঘণ্টা উপোসের পর নাশতা করা একটি ভালো বিকল্প।
যাঁদের ডায়াবেটিস বা অন্য শারীরিক সমস্যা রয়েছে, তাঁদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নাশতা করতে হবে।
সূত্র: এডিনবরা লাইভ