সুস্থ জীবনযাপনের জন্য নিয়মিত ঘুম অপরিহার্য। প্রতিদিনের ক্লান্তি দূর করতে এবং শরীরের সঠিক কার্যক্রম বজায় রাখতে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রতিরাতে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা ঘুমানো আবশ্যক। কিন্তু অনেকেই ঘুমের সমস্যায় ভুগছেন, ঘুমানোর জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়, তবুও ঘুম আসে না। এমন অবস্থায় অনেকে ঘুমের ওষুধের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন, যা দীর্ঘমেয়াদে শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঘুমের ওষুধ গ্রহণ করা উচিত নয়। অনিয়মিত ঘুমের ফলে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ে। আসুন, জেনে নিই অনিয়মিত ঘুমের ফলে যেসব রোগের ঝুঁকি বাড়ে এবং প্রতিকারের উপায়।
১. উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা বাড়তে পারে। ঘুমের অভাবে শরীরের লিভিং অরগানিজমগুলো সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না, ফলে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে উচ্চ রক্তচাপ ও হাইপার টেনশন দেখা দিতে পারে।
২. হার্টের সমস্যা
ঘুমের সময় হৃদপিণ্ড এবং রক্তনালিগুলো বিশ্রাম পায়। কিন্তু ঘুমের অভাবে এই বিশ্রাম প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়, যা কার্ডিওভাসকুলার সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়। এর ফলে হার্টের সমস্যা বাড়তে থাকে এবং দীর্ঘমেয়াদে হৃদরোগের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
৩. ডায়াবেটিসের ঝুঁকি
দীর্ঘ সময় ধরে পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে শরীরে ইনসুলিন উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয়, যা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। নিয়মিত কম ঘুমানো বা রাতে ঘুম না হলে শরীরের রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়তে থাকে, যা ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে।
৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার হ্রাস
ঘুম শরীরের ক্ষতি পূরণ ও শক্তি সঞ্চয়ের একটি পন্থা। আমরা যখন ঘুমাই, তখন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য প্রয়োজনীয় লিভিং অরগানিজমগুলো সক্রিয় থাকে। কিন্তু পর্যাপ্ত ঘুম না হলে এই অরগানিজমগুলো ঠিকমতো কাজ করতে পারে না, ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
৫. মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা হ্রাস
মস্তিষ্কে ওরেক্সিন নামের একটি নিউরোট্রান্সমিটার আছে, যা মস্তিষ্ককে সচল রাখতে সহায়তা করে। প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুম না হলে ওরেক্সিন উৎপাদনের গতি মন্থর হয়ে যায়, ফলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা হ্রাস পায় এবং বিভিন্ন মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৬. হজমের সমস্যা
ঘুমের অভাবে শরীরের পাচন ক্রিয়া সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। না ঘুমালে পাচক রসগুলো উপযুক্ত মাত্রায় নিঃসৃত হয় না, ফলে খাবার হজমে সমস্যা দেখা দেয়। এটি দীর্ঘমেয়াদে গ্যাস্ট্রিক, অম্লতা, এবং অন্যান্য হজমজনিত সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়।
প্রতিকার ও করণীয়
অনিয়মিত ঘুমের ফলে বিভিন্ন গুরুতর রোগের ঝুঁকি বাড়ে। তাই ঘুমের ব্যাপারে কোনো রকম অবহেলা করা উচিত নয়। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুমানোর আগে রিল্যাক্সেশন টেকনিক, যেমন মেডিটেশন বা যোগব্যায়াম, অবলম্বন করা যেতে পারে। রাতে অতিরিক্ত কাজ, চা-কফি, বা সোশ্যাল মিডিয়ায় অতিরিক্ত সময় ব্যয় করা থেকে বিরত থাকুন। যদি ঘুমের সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
নিয়মিত ঘুম আমাদের স্বাস্থ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমাদের দৈহিক কার্যকলাপের বেশিরভাগই ঘুমের ওপর নির্ভরশীল। তাই প্রতিদিন অন্তত ৬-৭ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করুন এবং সুস্থ জীবনযাপন করুন।