রাজবাড়ী-২ আসনের সাবেক রেলমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম ও তার ছেলে মিতুল হাকিমের বিরুদ্ধে রাজবাড়ীতে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের ১৬ বছরের শাসনামলে তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। এতদিন মুখ বন্ধ রাখলেও সরকারের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অনেকে তাদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে মুখ খুলতে শুরু করেছেন।
জানা যায়, ১৯৯৬ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী হিসেবে জিল্লুল হাকিম পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এই সময়ে তিনি এলাকায় গড়ে তোলেন নিজস্ব সন্ত্রাস ও ক্যাডার বাহিনী, যা দিয়ে হত্যা, নির্যাতন, দখলবাজি এবং অর্থপাচারসহ নানা অপরাধমূলক কাজ করেছেন। তাদের কর্মকাণ্ডের শিকার হন শিক্ষক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী এমনকি আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরাও। তাদের অনেকেই চিরদিনের জন্য পঙ্গু হয়ে গেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জিল্লুল হাকিম ক্ষমতার জোরে জেলা পরিষদের জায়গা দখল করে গড়ে তোলেন আলিশান মার্কেট। এছাড়া, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার দপ্তরি নিয়োগ থেকে শুরু করে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস এবং অন্যান্য সরকারি অফিস থেকে কমিশন নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এসব অপরাধের মাধ্যমে তিনি হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন।
পাংশা বয়রাট মাজাইল ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. সিরাজুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, “মাদ্রাসার একটি পদে অবৈধভাবে নিয়োগ দিতে চাওয়ার কারণে আমি স্বাক্ষর না করায় আমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয় এবং দীর্ঘ ১১ বছর ধরে আমার বেতন ভাতা বন্ধ করে রাখা হয়।”
পাংশা উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ জানান, ২০১৭ সালের ২১ সেপ্টেম্বর তার ওপর অতর্কিতভাবে হামলা চালানো হয়, যা নির্দেশ দেন জিল্লুল হাকিম ও তার ছেলে মিতুল। এছাড়া, ব্যবসায়ী জিয়াউর রহমান মহির বলেন, “২০১৮ সালে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কারণে জিল্লুল হাকিমের ক্যাডার বাহিনীর আক্রমণে আমার পা ভেঙে যায়।”
এস এম আতাউল্লাহ শামীম রহমান, পাংশা বাগদুলী উচ্চ বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক, অভিযোগ করে বলেন, “২০১৮ সালের ৬ আগস্ট আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে জিল্লুল হাকিম ও তার ছেলের নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়।”
এদিকে, এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে জিল্লুল হাকিম ও তার ছেলে মিতুল হাকিমের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা যায়নি।
স্থানীয় এলাকাবাসী বর্তমান সরকারের কাছে এই বাবা-ছেলের অপরাধের কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন।