বান্দরবানের থানচি উপজেলার মিয়ানমার সীমান্তবর্তী দুর্গম পাড়াগুলোতে দেখা দিয়েছে তীব্র খাদ্যাভাব। বিশেষ করে মেনহাক পাড়া, বুলু পাড়া, তাংখোয়াই পাড়া, এবং য়ংডং পাড়ায় প্রায় ৬৪টি পরিবার বাঁশ কোড়ল খেয়ে জীবনযাপন করছেন। স্থানীয়রা জানায়, গত বছর বন্যার কারণে জুমের ফলন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পর্যাপ্ত ফসল মজুদ করতে পারেনি এসব এলাকার মানুষ। ফলে গত মে মাস থেকে এই খাদ্য সংকট শুরু হলেও বিভিন্নভাবে ধার দেনা করে কোনোভাবে বেঁচে আছেন তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, গ্রামগুলোতে শিশুরা ক্ষুধার তাড়নায় কাঁদছে, আর মায়েরা অসহায়ভাবে বসে আছেন। ঘরে নেই কোনো চাল, ফলে প্রতিদিন বাঁশ কোড়ল সিদ্ধ করে খেতে বাধ্য হচ্ছেন। পুরুষেরা চাল ধার করতে গ্রামেগঞ্জে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কেউ কেউ কাঁচা ধান সংগ্রহ করে আগাম সিদ্ধ করে শুকানোর চেষ্টা করছেন। এরপর ঢেঁকিতে মাড়াই করে কোনোভাবে চাল উৎপাদন করছেন, যা বাঁশ কোড়লের সঙ্গে মিশিয়ে দিনে তিন বেলা খেতে হচ্ছে তাদের।
আদাপাড়ার বাসিন্দা ঙৈলিং ম্রো বলেন, “গত তিন মাস ধরে আমরা বাঁশ কোড়ল খেয়ে জীবনযাপন করছি। সরকার থেকে কোনো সহায়তা পাইনি।” স্থানীয় কারবারিরাও জানান, এই সংকটের ফলে চারটি পাড়ার ৬৪টি পরিবার বর্তমানে চরম দুরবস্থার মধ্যে আছে। সীমান্তবর্তী পাড়াগুলোতে পৌঁছানোর একমাত্র মাধ্যম হলো নদীপথ, কিন্তু ভারী বৃষ্টির কারণে সাঙ্গু নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে নদীপথে পণ্য পরিবহনের খরচও বেড়ে গেছে, যা এই সংকটকে আরও তীব্রতর করেছে।
থানচি ইউএনও মোহাম্মদ মামুন জানান, “রেমাক্রি ইউনিয়নটা অত্যন্ত দুর্গম এলাকা। লিক্রি, তাংখোয়াই পাড়াসহ আরও কিছু পাড়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত সীমিত। সেখানে খাদ্য সংকট রয়েছে, তাই রোববার দুটি নৌকায় করে ১ টন চাল পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”
উল্লেখ্য, গত বছরে অতিবৃষ্টির কারণে থানচি উপজেলার চারটি ইউনিয়নের ২,৩০০ পরিবার খাদ্য সংকটে পড়ে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার ৪৬ টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেয়, কিন্তু তা পর্যাপ্ত ছিল না। বর্তমানে আরও ত্রাণ সহায়তার প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।