ফেনী জেলায় ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ। ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং অতিবৃষ্টির ফলে জেলার ৬টি উপজেলা প্লাবিত হয়, যার ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়েন প্রায় ১০ লাখ মানুষ। নেমে আসা তীব্র পানির স্রোতে ভেসে যান অনেকে, যদিও পানির উচ্চতা এবং স্রোতের কারণে তাৎক্ষণিকভাবে মৃতের সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। তবে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে গলিত মরদেহ পাওয়ার ঘটনাও বাড়ছে।
বুধবার (২৮ আগস্ট) রাতে ফেনী জেলা প্রশাসনের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, এখন পর্যন্ত জেলার মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ জনে। মৃতদের মধ্যে ফেনী সদর উপজেলার লালপুল এলাকায় অজ্ঞাত দুই পুরুষ (৩৩) ও (৪৫) এবং ছাগলনাইয়া উপজেলায় অজ্ঞাত এক নারী (৩৮) রয়েছেন। এছাড়া পরশুরাম উপজেলার ধনিকুন্ডা এলাকার সাহাব উদ্দিন (৭০), মির্জানগর ইউনিয়নের দেলোয়ার হোসেন (৫০), ফুলগাজী উপজেলার নোয়াপুর এলাকার শাকিলা (২২), এবং উত্তর করইয়ার কিরণ (২০) সহ আরও বেশ কয়েকজনের মরদেহ পাওয়া গেছে।
বন্যায় সৃষ্ট এই মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে ২৪ আগস্ট রাতে ফেনী শহরের মিজান রোডে সোনালী ব্যাংকের সামনে একটি ভেলায় ভাসমান অবস্থায় একটি মরদেহ দেখতে পান স্থানীয়রা। পরে তা উদ্ধার করে জানাজা এবং দাফনের ব্যবস্থা করা হয়। একইভাবে, ২৫ আগস্ট ফেনী সদর উপজেলার লালপোল এলাকায় বন্যার পানিতে ভেসে আসা একটি শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এই বন্যা কেবল প্রাণহানিই ঘটায়নি, বরং ফেনীর মানুষের জন্য একটি বিশাল মানবিক বিপর্যয়ও ডেকে এনেছে। প্রবাসী মাসুদ খান ফেসবুকে তার বাবার মরদেহ ভেলায় ভাসানোর কথা উল্লেখ করে লেখেন, “আমার বাবাকে কলাগাছের ভেলা দিয়ে বন্যার পানিতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কেউ বোট বা উদ্ধারকর্মী নিয়ে এলে হয়তো তাকে ফ্রিজিং করে রাখা যেত।”
গত ২০ আগস্ট দুপুর থেকে শুরু হওয়া এই বন্যা ২১ আগস্ট থেকে ভয়াবহ রূপ নেয়। প্রাথমিকভাবে জেলার পরশুরাম, ফুলগাজী, ও ছাগলনাইয়া উপজেলায় বন্যার শুরু হলেও পরবর্তীতে তা ছড়িয়ে পড়ে ফেনী সদর, সোনাগাজী, এবং দাগনভূঞা উপজেলায়। এ ভয়াবহ বন্যায় ফেনী জেলার মানুষ চরম মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।