শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পরপরই আয়নাঘর নামক একটি গোপন বন্দিশালা থেকে মুক্তি পেয়েছেন বেশ কয়েকজন নির্যাতিত বন্দি। তাদের মধ্যে অন্যতম পার্বত্য চট্টগ্রাম ভিত্তিক আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ইউপিডিএফ-এর সাবেক নেতা মাইকেল চাকমা। ৫ বছর ৩ মাস ধরে অন্ধকার ছোট্ট একটি ঘরে বন্দি ছিলেন তিনি, যেখানে ছিল না পর্যাপ্ত আলো-বাতাস। দীর্ঘ এই বন্দিদশায় সহ্য করতে হয়েছে অসহনীয় নির্যাতন।
মুক্তি পাওয়ার পর সময় সংবাদকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মাইকেল চাকমা তার সেই দুঃসহ দিনগুলোর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। তিনি জানান, ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় ফেরার পথে কল্যানপুর বাস টার্মিনাল থেকে গোয়েন্দা পরিচয়ে তাকে সাদা মাইক্রোবাসে তুলে নেয়া হয় এবং কালো কাপড়ে মুখ বেঁধে ফেলা হয়। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় একটি ছোট অন্ধকার কুঠুরিতে, যা দুনিয়া থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ছিল। সেই বন্দিশালার অভিজ্ঞতা যেন কোনো থ্রিলার সিনেমার থেকেও ভয়ংকর ছিল।
প্রথমদিকে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও মারধর করা হয়নি। তবে যে পরিবেশে তাকে বন্দি করে রাখা হয়, তা অত্যন্ত অমানবিক ও ভয়ংকর ছিল। সেই ঘরটি ছিল অনেকটা গুহার মতো, যেখানে মানুষের টিকে থাকা ছিল প্রায় অসম্ভব।
মাইকেল আরও জানান, বন্দিশালা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি জানতে পারেন, তার পিতা আর বেঁচে নেই। মাইকেলের শোকে তার পিতা মৃত্যুবরণ করেছেন, এমনকি মাইকেল চাকমা জীবিত নেই ধরে নিয়ে তার পরিবার তার শেষকৃত্যও সম্পন্ন করেছে।
মাইকেল জানান, বন্দিশালায় আরও অনেক বন্দিকে তিনি দেখতে পেয়েছেন। সেখানে তার সঙ্গে ছিলেন সাইদুল ও এরশাদ নামে দুইজন ব্যক্তি। সাইদুলের বাড়ি রংপুরে এবং এরশাদের বাড়ি ঢাকার কচুক্ষেতে। এছাড়া আরও দুজনের নাম তিনি শুনতে পেয়েছেন, যাদের দেখেননি। তবে তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা জানা নেই মাইকেলের।
তিনি বলেন, বন্দিশালায় কারও সঙ্গে দেখা বা কথা বলার সুযোগ ছিল না। তবে গোসল করতে নেয়ার সময় বাথরুমের ছিদ্র দিয়ে উঁকি দিয়ে তিনি বিভিন্ন সময় অনেককে দেখেছেন, যাদের চুল ও দাড়ি ছিল পাঁকা, বয়সের তারতম্য ছিল স্পষ্ট।
এই ঘটনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলছে। মাইকেল চাকমার অভিজ্ঞতা দেশের আইনের শাসন এবং মানবাধিকার সুরক্ষার ক্ষেত্রে যে দুর্বলতা রয়েছে, তা স্পষ্ট করছে।