এক দশকেরও বেশি সময় পর বিতর্কিত বহুমুখী বিপণন (এমএলএম) কোম্পানি ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড আবারও ব্যবসায় ফিরে আসার ঘোষণা দিয়েছে। একইসঙ্গে বিনিয়োগকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে এ অর্থ ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পদ বিক্রির মাধ্যমে নয়, বরং ব্যবসা পরিচালনার মাধ্যমে সম্পন্ন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
রোববার (৫ জানুয়ারি) রাজধানীর কাকরাইলের আইডিইবি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ডেসটিনির ‘২৫ বছরে পদার্পণ’ অনুষ্ঠানে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানটির ১৯ সদস্যের পর্ষদ, যার মধ্যে ১২ জন শেয়ারহোল্ডার পরিচালক, উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পর্ষদের স্বতন্ত্র পরিচালক আহমেদ মুশফেক আনাম।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আদালত নিযুক্ত ডেসটিনির চেয়ারম্যান এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ বড়ুয়া। তিনি অনলাইনে যুক্ত হয়ে বলেন, “আমরা ব্যবসা শুরুর দ্বারপ্রান্তে। শিগগির আমাদের হতাশা দূর হয়ে যাবে।”
ডেসটিনি ২০০০ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীনের অনুপস্থিতিতে তার আত্মীয় আশরাফুল আমীন বর্তমানে কোম্পানিটি পুনর্গঠনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কোম্পানিটির দাবি, গ্রাহকদের কাছ থেকে যে পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি সম্পদ প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিশেষ অতিথি সাংবাদিক এম এ আজিজ বলেন, “ডেসটিনি ২০০০ এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যার বিরুদ্ধে বিনিয়োগকারীদের কোনো অভিযোগ নেই। প্রতিষ্ঠানটির ৪৫ লাখ প্রশিক্ষিত গ্রাহক আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ।”
পরিচালক মোহাম্মদ ইকবাল জামাল বলেন, “একটি দামি গাড়ি ১২ বছর চলেছিল, এরপর ১২ বছর গ্যারেজে ছিল। কিন্তু এই গাড়ি আর থামবে না।”
আশরাফুল আমীন জানান, বিনিয়োগকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়া হবে ব্যবসার মাধ্যমে। তিনি বলেন, “আগামী রমজানে আমরা সারা দেশে অলাভজনক ফুড ব্যাংক স্থাপন করতে চাই।”
২০০১ সালের ৫ জানুয়ারি ডেসটিনির যাত্রা শুরু হয় এবং প্রথম এক যুগ সফলভাবে ব্যবসা পরিচালনা করে। তবে ২০১২ সালে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করে। অভিযোগ ছিল, ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশনের গাছ বিক্রির নামে ২,২৫৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
২০১২ সালে দায়ের হওয়া মামলায় প্রতিষ্ঠানটির এমডি রফিকুল আমীনসহ ৪৫ জন বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হন। ২০২4 সালের ১৫ জানুয়ারি এই মামলার পরবর্তী রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারিত রয়েছে।
ডেসটিনির নতুন চেয়ারম্যান প্রশান্ত ভূষণ বড়ুয়া এবং অন্যান্য পরিচালকরা আত্মবিশ্বাসী যে, তারা গ্রাহকদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবেন। অনুষ্ঠানের সভাপতি আহমেদ মুশফেক আনাম বলেন, “ডেসটিনির গ্রাহকেরা উদ্যোক্তা হিসেবে আমাদের প্রকৃত শক্তি। আমরা এই শক্তির মাধ্যমেই নতুন করে এগিয়ে যাব।”
ডেসটিনির এই নবযাত্রা কতটা সফল হয়, তা দেখার অপেক্ষায় দেশজুড়ে থাকা ৪৫ লাখ গ্রাহক। কোম্পানিটি তাদের নতুন পরিকল্পনা ও প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছে।