সেন্টমার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। পাথুরে এ দ্বীপটি তার অনন্য জীববৈচিত্র্য এবং প্রবালসমৃদ্ধ পরিবেশের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। তবে ১৯৯৭ সালের পর থেকে এ দ্বীপের প্রাণ-প্রকৃতি নিয়ে কোনো পূর্ণাঙ্গ সরকারি জরিপ হয়নি। ২০১৮ সালে কক্সবাজারে সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা হলেও নানা প্রতিবন্ধকতায় তা পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যকর হতে পারেনি। সমুদ্র বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ দ্বীপ নিয়ে আন্ডার ওয়াটার গবেষণা অত্যন্ত জরুরি।
১৯৯৭ সালে কানাডিয়ান সমুদ্রবিজ্ঞানী থমাস তমাসিকের নেতৃত্বে একটি গবেষণায় সেন্টমার্টিনের সমৃদ্ধ প্রাণ-প্রকৃতির তথ্য পাওয়া যায়। সরকারি হিসেব অনুযায়ী, দ্বীপটিতে রয়েছে ৬৬ প্রজাতির প্রবাল, ১৮৭ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক, ১৫৩ প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল এবং কচ্ছপ, কাঁকড়াসহ অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণী। তবে এসব তথ্য দীর্ঘদিন ধরে হালনাগাদ হয়নি। বিচ্ছিন্ন কিছু গবেষণায় প্রবালের সংখ্যা কমার প্রমাণ মিললেও নতুন স্থানে প্রবালের জন্মও লক্ষ্য করা গেছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. শাহ নেওয়াজ চৌধুরী বলেন, “একটি দেশের জন্য তার সামুদ্রিক অঞ্চলের ডেটা সংরক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এখন এ তথ্য রেকর্ড রাখা শুরু করেছি।” তবে পূর্ণাঙ্গ গবেষণার অভাব সেন্টমার্টিনের প্রকৃতি সংরক্ষণে বড় বাধা হিসেবে দাঁড়িয়েছে।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপ দেশের পর্যটন শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণে এটি কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে। বিলাসবহুল ভ্রমণ গন্তব্যে পরিণত করতে দ্বীপটিকে ঘিরে একটি মহাপরিকল্পনা তৈরি করার তাগিদ দেন তিনি।
বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন, পরিবেশের সাথে সমন্বয় রেখে পর্যটন খাতে নতুন পরিকল্পনা নেয়া হবে। সেন্টমার্টিনের সর্বদক্ষিণের অংশ ছেঁড়াদ্বীপ নিয়ে আলাদা পরিকল্পনার কথাও উল্লেখ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
দ্বীপের পরিবেশ, প্রাণ-প্রকৃতি এবং পর্যটনের সমন্বয়ে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে সেন্টমার্টিন হতে পারে দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় ভ্রমণ গন্তব্য। তবে এ জন্য প্রয়োজন দ্রুত ও পূর্ণাঙ্গ গবেষণা, যা দ্বীপটির ভবিষ্যৎ রক্ষায় মাইলফলক হয়ে দাঁড়াবে।