গাজীপুরের শ্রীপুরে ভাংনাহাটি গ্রামের এমঅ্যান্ডইউ ট্রিমস কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠে আশপাশের এলাকা। এ ঘটনায় একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, তবে তার পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিট কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে, তবে কেমিক্যাল ড্রাম বিস্ফোরণের কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
রোববার দুপুর দেড়টার দিকে শ্রীপুর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ওই কারখানায় আগুন লাগে। কারখানার শ্রমিক রুহুল আমিন জানান, হঠাৎ করেই কেমিক্যাল গুদাম থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। এরপর মুহূর্তের মধ্যে একাধিক বিকট বিস্ফোরণ হয়। এতে আতঙ্কিত হয়ে শ্রমিকেরা প্রাণ বাঁচাতে ছোটাছুটি শুরু করেন।
একাধিক বিস্ফোরণে পুরো কারখানাটি ধোঁয়ায় ঢেকে যায়। অনেকে দৌড়ে বেরিয়ে যেতে সক্ষম হলেও কয়েকজন গুরুতর আহত হন। আহতদের দ্রুত স্থানীয় হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের সঙ্গে শ্রমিকেরাও আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেন।
ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আল মামুন বলেন, “জয়দেবপুর থেকে তিনটি ইউনিট এবং শ্রীপুর থেকে চারটি ইউনিট কাজ করছে। বিস্ফোরণের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হচ্ছে। আগুনের প্রচণ্ড তাপে ভবনের ভেতরে প্রবেশ করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার মো. হুমায়ুন কবির বলেন, “কেমিক্যাল ড্রামের বিস্ফোরণের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফোম ও পানি ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আরও সময় লাগবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।”
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন মণ্ডল জানান, আগুন নেভানোর পর ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আগুনে পুড়ে লাশটি এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে তাৎক্ষণিকভাবে পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
এছাড়া আহত কয়েকজনকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
কারখানার এক শ্রমিক মফিজুল ইসলাম বলেন, “আমি তখন গুদামের কাছেই কাজ করছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দ হয় এবং আগুন ছড়িয়ে পড়ে। চারদিকে ধোঁয়া আর আগুন দেখে আমি দ্রুত দৌড়ে বাইরে বের হই।”
স্থানীয় বাসিন্দা সেলিম মিয়া বলেন, “বিস্ফোরণের শব্দ এতটাই জোরালো ছিল যে মনে হয়েছিল ভূমিকম্প হয়েছে। আমরা আতঙ্কিত হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ি।”
এ ধরনের কেমিক্যাল গুদামে অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথাযথ ছিল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেই অভিযোগ করছেন, কারখানাটিতে পর্যাপ্ত অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আল মামুন বলেন, “কেমিক্যাল মজুত রাখার সময় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, এই কারখানায় সেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথেষ্ট ছিল না।”
শ্রীপুর থানার ওসি জয়নাল আবেদীন মণ্ডল জানান, “পুলিশের একাধিক দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং আশপাশের জনসাধারণকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে আমরা কাজ করছি।”
তিনি আরও বলেন, “প্রাথমিক তদন্ত চলছে। এ ঘটনায় কারখানার মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা, তা তদন্তের পর সিদ্ধান্ত হবে।”
ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। গুদামে থাকা দাহ্য কেমিক্যালের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফোমের ব্যবহার বাড়ানো হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, “আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টার মাধ্যমে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছি। তবে এখনো কিছু অংশে আগুন জ্বলছে।”
কারখানার ব্যবস্থাপক মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, “আমরা সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বজায় রেখেই কাজ চালিয়ে আসছিলাম। কীভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটল, তা আমাদেরও বোধগম্য নয়। তবে আমরা আহতদের চিকিৎসায় সহায়তা করছি এবং প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।”
এদিকে শ্রমিকদের অভিযোগ, কারখানাটিতে দীর্ঘদিন ধরে পুরনো কেমিক্যাল মজুত রাখা হচ্ছিল। এগুলো নিয়মিত পরিদর্শন করা হয়নি। ফলে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে তারা মনে করছেন।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঘটনাটি তদন্তের জন্য একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হবে। কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গাজীপুরের শ্রীপুরে কেমিক্যাল গুদামে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। একজনের মৃত্যু ও কয়েকজনের আহত হওয়ার এ ঘটনা এলাকাবাসীকে নাড়িয়ে দিয়েছে। প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিস পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
তবে এই ঘটনা আবারও কেমিক্যাল কারখানাগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা