ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে ইজারার শর্ত ভঙ্গ করে মেঘনা নদী ও তীরবর্তী স্থান ভরাট করে জেটি নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। এতে বড় জাহাজ থেকে মালামাল খালাসের পর আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশনের পানি নিঃসরণ পাইপের ওপর দিয়ে ভারী যানবাহনের চলাচল শুরু হয়েছে। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড (এপিএসসিএল)-এর দুটি বিদ্যুৎ উৎপাদন ইউনিট।
ইতোমধ্যে জেটিটি সরিয়ে নিতে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অনুরোধ জানিয়েছে কেপিআই (Key Point Installation) এই প্রতিষ্ঠান। জেলা প্রশাসনও দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ ও এপিএসসিএল-এর অভিযোগে জানা যায়, গত ৩০ জুন আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড চ্যানেল-১ এর শুল্ক আদায়ের জন্য বিআইডব্লিউটিএ জায়গাটি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ইজারা দেয়। ইজারাটি পান আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. শাহজাহান। তবে শর্ত ছিল নদীর পাড় ব্যবহার করে কেবল যাত্রী ও মালামাল ওঠা-নামার কাজ করা যাবে।
কিন্তু ইজারাদার শর্ত ভঙ্গ করে মেঘনা নদী ও তীরবর্তী বিশাল এলাকা ইট-বালু দিয়ে ভরাট করে সড়ক নির্মাণ করেন। সেখানে ক্রেন দিয়ে জাহাজ থেকে মালামাল খালাস করে ভারী যানবাহনের মাধ্যমে সরবরাহ করা হচ্ছে। এসব ভারী যানবাহন বিদ্যুৎকেন্দ্রের পানি নিঃসরণ পাইপের ওপর দিয়ে চলাচল করায় ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এপিএসসিএল-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভারী যানবাহনের চাপের কারণে ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ইস্ট প্ল্যান্টের ওয়াটার ইনটেক পাইপ, ফায়ার ও সার্ভিস ওয়াটার পাইপ, ড্রিংকিং ওয়াটার পাইপ এবং ২২৫ মেগাওয়াট ইউনিটের আউটফল পাইপ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এর ফলে যন্ত্রপাতির আয়ুষ্কাল কমে যাওয়া এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে দীর্ঘমেয়াদী বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে জেলা প্রশাসক মো. দিদারুল আলম সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, “কেপিআই প্রতিষ্ঠানের পাশে এমন অবৈধ ঘাট থাকতে পারে না। দ্রুত এটি অপসারণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ইজারাদার মো. শাহজাহান বলেন, “ঘাটটি বহু আগে থেকেই ছিল। কৃষিপণ্য ওঠা-নামার জন্য বিআইডব্লিউটিএ এই স্থানটি বন্দোবস্ত দেয়। এবার আমার নামে ইজারা হওয়ায় তারা ষড়যন্ত্র করছে। তবে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষতি হোক, তা আমরা চাই না।”
নদী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ সংগঠন ‘তরী বাংলাদেশ’-এর আহ্বায়ক শামীম আহমেদ বলেন, “নদীর তীরভূমি ভরাট করে জেটি নির্মাণ করা পরিবেশের জন্য হুমকি। বিআইডব্লিউটিএ’র অবহেলা ছাড়া এটি সম্ভব নয়।”
আশুগঞ্জ-ভৈরব বাজার নদী বন্দরের উপ-পরিচালক মো. মহিউদ্দিন খান বলেন, “ইজারাদার প্রভাব খাটিয়ে শর্ত ভঙ্গ করে ঘাট নির্মাণ করেছে। তাকে ঘাটটি অপসারণের জন্য বলা হয়েছে এবং থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।”