বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি বুধবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও চলমান সংস্কার কার্যক্রমে জাপানের দৃঢ় সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি জানান, জাপানি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের সম্ভাবনাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন এবং দেশটিতে তাদের উপস্থিতি বজায় রাখার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সাক্ষাৎটি অনুষ্ঠিত হয় ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায়। এটি ছিল বিদায়ী রাষ্ট্রদূতের সম্মানসূচক একটি সাক্ষাৎ। এ সময় তিনি বাংলাদেশের শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে জাপানের ভূমিকার ওপর আলোকপাত করেন।
রাষ্ট্রদূত কিমিনোরি বলেন, “জাপান-বাংলাদেশ সম্পর্ক তিনটি মূল স্তম্ভের ওপর প্রতিষ্ঠিত: শান্তি ও স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং জনগণের মধ্যে সম্পর্ক। আমরা এই স্তম্ভগুলো শক্তিশালী করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।”
তিনি জানান, বাংলাদেশের চলমান সংস্কার কার্যক্রম এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্বাচনি ব্যবস্থার প্রতি টোকিওর পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। এছাড়া, তিনি দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান গভীর সম্পর্ককে আরও সুসংহত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
বিদায়ী রাষ্ট্রদূত অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেন, “আপনার নেতৃত্বের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা। আপনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।” অধ্যাপক ইউনূসও জাপানের অবদানের প্রশংসা করেন এবং বাংলাদেশের অগ্রগতিতে জাপানি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণকে গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন।
প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশ সরকার বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি আমাদের জন্য ইতিবাচক বার্তা দেয়। আমরা আশা করি, জাপানের আরও বেশি কোম্পানি এখানে বিনিয়োগ করবে।”
বিদায়ী রাষ্ট্রদূত জানান, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ থেকে কোনো জাপানি কোম্পানি তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়নি। বরং তারা এখানে থাকতে এবং ব্যবসায়িক সুযোগ সম্প্রসারণে আগ্রহী।
রাষ্ট্রদূত কিমিনোরি অধ্যাপক ইউনূসকে নিক্কেইয়ের বার্ষিক সম্মেলনে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানান। এই সম্মেলনে জাপানের প্রধানমন্ত্রীসহ শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত থাকবেন। তিনি বলেন, “এই সম্মেলন অধ্যাপক ইউনূসকে জাপানের শীর্ষ কোম্পানিগুলোর সিইওদের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানানোর সুযোগ করে দেবে।”
রোহিঙ্গা ইস্যুতে অধ্যাপক ইউনূসের পদক্ষেপের প্রশংসা করে জাপানের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত জানান, টোকিও এই সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক উদ্যোগে দৃঢ়ভাবে সমর্থন দিয়ে যাবে। তিনি বলেন, “রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের অবদান বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত।”
অধ্যাপক ইউনূস এ সময় মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জাতিসংঘের গ্যারান্টিযুক্ত একটি নিরাপদ এলাকা তৈরির প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, “এটি বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে সহায়তা করতে পারে, যতক্ষণ না তারা নিরাপদে নিজ বাড়িতে ফিরে যেতে পারে।”
সাক্ষাৎকালে অধ্যাপক ইউনূস দুই দেশের মধ্যকার দীর্ঘদিনের সম্পর্কের প্রশংসা করে বলেন, “জাপান-বাংলাদেশ সম্পর্ক সবসময়ই খুব শক্তিশালী ছিল। ভবিষ্যতেও এই সম্পর্ক আরও গভীর হবে।”
রাষ্ট্রদূত কিমিনোরি বিদায়ী সময়েও জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্ক উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশে আমার সময়কালে আমি দেখেছি, এই দেশটি অসাধারণ সম্ভাবনায় পূর্ণ। আমি এই সম্পর্ক আরও উন্নত দেখতে চাই।”
জাপানের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরির এই সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইতিবাচক দিক তুলে ধরেছে। তার বক্তব্যে স্পষ্ট যে, জাপান-বাংলাদেশ সম্পর্ক শুধু অতীতে নয়, ভবিষ্যতেও শান্তি, সহযোগিতা এবং পারস্পরিক উন্নয়নের ভিত্তিতে আরও মজবুত হবে।