হাতিয়া উপজেলার চর আতাউরের একটি ডুবোচরে আটকা পড়েছে একটি বিশাল আকৃতির তিমি। এত বড় তিমি চোখের সামনে দেখার সুযোগ জীবনে প্রথমবার পেল স্থানীয় দ্বীপবাসী। বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে এ ঘটনার পর পুরো এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। গ্রামবাসী, নারী-পুরুষ এবং শিশুদের ভিড় উপচে পড়ে নদীর তীরে। তিমি উদ্ধারের চেষ্টায় স্থানীয় জেলেদের সঙ্গে যুক্ত হয় কোস্টগার্ড। শেষ পর্যন্ত তারা সফলভাবে তিমিটিকে গভীর পানিতে ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হয়।
চর আতাউরের জেলেরা প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবার ভোরে নদীতে কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিলেন। হঠাৎই তারা দেখেন, চরে একটি বিশাল আকৃতির তিমি আটকে আছে। তিমির দৈর্ঘ্য ও আকৃতির বিশালত্ব দেখে প্রথমে জেলেরা ভয় পেয়ে যান। পরবর্তীতে তারা সাহস করে এগিয়ে গিয়ে তিমিটিকে পর্যবেক্ষণ করেন। স্থানীয় জেলে আব্দুল করিম বলেন, “তিমি এত বড় হবে তা কখনও ভাবিনি। প্রথমে ভয় পেলেও পরে বুঝলাম এটি কিছুটা বিপদে পড়েছে।”
জেলেরা তিমিটিকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন। তারা তিমির গায়ে রশি বেঁধে সেটিকে পানিতে নামানোর চেষ্টা করেন। তবে কাজটি সহজ ছিল না। তিমি প্রায় ৫০ মণ ওজনের হওয়ায় সেটিকে নড়ানো দুষ্কর হয়ে পড়ে।
খবর পেয়ে হাতিয়া কোস্টগার্ডের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তারা দেখেন, বিশাল এই তিমি কাদার সঙ্গে আটকে আছে এবং কোনোভাবেই নিজে থেকে নড়তে পারছে না। হাতিয়া কোস্টগার্ডের স্টেশন কমান্ডার মো. খালিছুর রহমান বলেন, “তিমিটি দলছুট হয়ে ভুল করে ছোট নদীতে চলে এসেছে। সম্ভবত রাতের জোয়ারে চরে আটকা পড়ে যায়।”
কোস্টগার্ডের সদস্যরা স্থানীয় জেলেদের সাহায্যে তিমিটিকে আবার পানিতে টেনে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেন। প্রথমে সেটিকে নদীতে নামিয়ে দেওয়া হলেও কিছুক্ষণ পর এটি আবার তীরে ফিরে আসে।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, জোয়ারের স্রোতের সঙ্গে তিমিটি দলছুট হয়ে এই এলাকায় চলে আসে। নদীর গভীরতা কম থাকায় এটি সহজে মুক্ত হতে পারেনি। আটকা পড়ার কারণে সেটি দিকভ্রান্ত হয়ে পড়ে।
তিমি বিষয়ক গবেষক মো. আমিনুল ইসলাম জানান, “তিমির স্বভাব হলো গভীর পানিতে থাকা। এটি হয়তো খাবারের খোঁজে এখানে এসে স্রোতে দিক হারিয়ে ফেলেছে।”
তিমি দেখতে চর আতাউরে সকাল থেকেই শত শত মানুষ জড়ো হয়। তাদের অনেকেই জীবনে প্রথমবার এমন দৃশ্য দেখার অভিজ্ঞতা লাভ করেন। শিশু ও বৃদ্ধ থেকে শুরু করে সবাই কৌতূহলী হয়ে তিমির দিকে তাকিয়ে থাকে।
স্থানীয় এক বৃদ্ধা রহিমা খাতুন বলেন, “আমার ৭০ বছর বয়সে এমন ঘটনা দেখিনি। এত বড় মাছ আমাদের এলাকায় এসেছে, এ যেন একটা আশীর্বাদ।”
অন্যদিকে, অনেকেই তিমিটিকে নিরাপদে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য নিজেদের দায়িত্ব মনে করেন। গ্রামের তরুণ মিজান বলেন, “এটা আমাদের অতিথি। আমরা চাই এটি নিরাপদে ফিরে যাক।”
কোস্টগার্ডের চেষ্টায় দুপুর নাগাদ তিমিটিকে গভীর পানিতে নামানো সম্ভব হয়। এরপর তিমিটি আর ফিরে আসেনি। কোস্টগার্ড সদস্যরা নিশ্চিত করেন, তিমিটি সঠিক পথে গভীর সাগরের দিকে যেতে পেরেছে।
তিমির আটকা পড়ার ঘটনা শুধু গ্রামবাসীর জন্য বিস্ময়কর নয়, বরং পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের জন্য একটি সতর্ক সংকেত। নদীর গভীরতা কমে যাওয়া, জলবায়ু পরিবর্তন, এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার কারণে এমন ঘটনা বাড়ছে।
পরিবেশবিদদের মতে, এ ধরনের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের নদ-নদী এবং সাগরের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতন হতে হবে। চর আতাউরে আটকা পড়া তিমিটি হয়তো উদ্ধার পেয়েছে, কিন্তু সবার দায়িত্ব হলো এই বিশাল প্রাণীদের জীবনযাত্রার পথকে আরও নিরাপদ করা।