রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রুশ বাহিনীর দ্রুত অগ্রগতি নতুন করে উত্তেজনা তৈরি করেছে। গত এক মাসে রাশিয়ার সেনাবাহিনী বড় ধরনের এলাকা দখল করেছে, যা বিশ্লেষকদের মতে ২০২২ সালে যুদ্ধ শুরুর পর সবচেয়ে দ্রুতগতির অগ্রগতি। ওপেন সোর্স মানচিত্র এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জানা গেছে, রাশিয়া বর্তমানে ইউক্রেনের ১৮% এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে।
এই অঞ্চলগুলোতে রয়েছে পুরো ক্রিমিয়া, ডনবাসের ৮০% (লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক), জাপোরিজঝিয়া ও খেরসনের ৭০%, এবং খারকিভের ৩%। রাশিয়ার এমন অগ্রগতি পশ্চিমা দেশগুলোর পাশাপাশি ইউক্রেনীয় প্রশাসনকে চরম দুশ্চিন্তায় ফেলেছে।
নভেম্বর মাসে রুশ বাহিনী ৬০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা দখল করেছে। শুধু গত এক সপ্তাহেই ২৩৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা তাদের নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এজেন্টস্টভো নামক এক সংস্থা বলছে, রাশিয়া বর্তমানে সাপ্তাহিক ও মাসিক অগ্রগতির দিক থেকে নতুন রেকর্ড গড়ছে।
জুলাই থেকে রাশিয়া পূর্ব ইউক্রেনের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। এর বিপরীতে ইউক্রেন কেবল পশ্চিমাঞ্চলীয় কুরস্কের একটি ছোট অংশ দখল করতে পেরেছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে রুশ বাহিনীর গতি বেড়েছে। বিশেষত, দোনেৎস্ক অঞ্চলে পোকরোভস্ক ও কুরাখোভ শহরের দিকে তারা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়ার বর্তমান কৌশল হচ্ছে ধীরে ধীরে এলাকাগুলো ঘেরাও করা এবং আর্টিলারি ও গ্লাইড বোমার সাহায্যে আক্রমণ চালানো। এই কৌশল তাদের দখলকৃত এলাকায় প্রতিরোধ শক্তি গড়ে তোলার সুযোগ দিচ্ছে। পোকরোভস্ক শহরের দিকে রুশ বাহিনী প্রবেশ করায় দোনেৎস্ক অঞ্চলের আরও কিছু এলাকাকে তারা বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এক বক্তব্যে বলেছেন, “রাশিয়ার দখলকৃত সব এলাকা ফেরত না পাওয়া পর্যন্ত শান্তি সম্ভব নয়।” তবে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী বর্তমানে সৈন্য ও সরঞ্জাম সরবরাহের চাপে রয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলো তাদের অস্ত্র ও সরঞ্জাম দিয়ে সাহায্য করলেও, এর পরিমাণ রাশিয়ার বিশাল সামরিক সম্পদের তুলনায় কম।
পশ্চিমা সামরিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুদ্ধ আরও দীর্ঘ হতে পারে। ইউক্রেনীয় বাহিনী রাশিয়ার অগ্রগতিকে প্রতিহত করার চেষ্টা করছে, তবে অনেক ক্ষেত্রে তাদের প্রতিরোধ রুশ বাহিনীর শক্তিশালী আক্রমণের সামনে দুর্বল হয়ে পড়ছে।
এই যুদ্ধে সঠিক ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যান পাওয়া কঠিন। তবে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মতে, উভয় পক্ষেই লাখ লাখ মানুষ হতাহত হয়েছেন। ইউক্রেনীয় বেসামরিক জনগণের জন্য এটি এক ভয়াবহ সংকট তৈরি করেছে। রাশিয়ার দখলকৃত অঞ্চলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠছে।
যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার সাথে সাথে পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে সামরিক ও অর্থনৈতিক সাহায্য দিয়ে যাচ্ছে। তবে রাশিয়ার দ্রুত অগ্রগতির কারণে এই সাহায্যের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুদ্ধ আরও দীর্ঘ হতে পারে এবং দুই পক্ষের জন্যই এটি রক্তক্ষয়ী হবে। রাশিয়া বর্তমানে তাদের দখলকৃত এলাকা ধরে রাখতে সক্ষম হলে, ইউক্রেনের ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার আরও কঠিন হয়ে পড়বে। ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর প্রতিরোধ এবং পশ্চিমা সহযোগিতার উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।
এই সংঘাত এখন একটি সংকটময় মোড় নিয়েছে, যার প্রভাব কেবল ইউক্রেন-রাশিয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং পুরো বিশ্বের উপর অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক প্রভাব ফেলছে।